মনে স্বপ্ন পুষে রেখেছিলেন সেই ছোটবেলা থেকে কি করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। মানুষের বিপদে পাশে থাকাটা যে কি আনন্দের, তা একমাত্র যে দাঁড়ায় সেই বুঝে। এসব কথাগুলো হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (উপ-সচিব) পদে কর্মরত আহসান হাবীবের। উনার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে। মনের ভিতরে থাকা স্বপ্নগুলোর বাস্তব রুপ দিতে এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন গরীব, অসহায় ও দুঃস্থদের জন্য চিকিৎসালয়। নাম দিয়েছেন মায়ের নামের সাথে মিল করে মর্জিনা খাতুন মানবিক সেবা কেন্দ্র সংক্ষেপে এমকেএমএস। প্রতি সপ্তাহে এখানে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বসেন যিনি পিজি হাসপাতাল থেকে আসেন। তিনি আসলে রোগীদের ভিড় জমে যায়। রোগীদের চিকিৎসা পেতে খুব সমস্যা হয় না। তাছাড়া মাঝে মাঝে এখানে চোখের রোগীদের জন্য চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। বগুড়া থেকে চোখের ডাক্তাররা এই চক্ষু শিবিরে যোগ দেন। যাদের অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে তাদেরকে যত্ন সহকারে বগুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবার অপারেশন শেষ করে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসাসেবার বাইরেও যে সমস্ত কাজ করে থাকে তার মধ্যে রয়েছে, অস্বচ্ছল এবং পঙ্গু রোগীদের জন্য হুইল চেয়ার ও সাদা ছড়ির ব্যবস্থা করা। শীতের সময় শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ। ঈদে অসহায়দের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ প্রভৃতি। এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় তারা যেন এই কাজ করে আনন্দের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিয়ে এসে আমি অনেক উপকার পেয়েছি। আমার চোখে ছানি ছিল। প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার চোখের চিকিৎসা করে এবং পরবর্তীতে বগুড়া নিয়ে গিয়ে চোখের ছানি অপারেশন করায়। ফলে আমি বর্তমানে সুস্থ রয়েছি। আমি প্রতিষ্ঠানের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ২০০০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠা করা এই প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত। অসহায় এবং দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। আমরা এখানে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকি। আমাদের এখানে সপ্তাহে একজন চোখের ডাক্তার বসে। মাসে দুইবার একজন নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসেন।
তাছাড়া প্রতি মাসে বিভিন্ন বিষয়ে একজন ডাক্তার এসে গরীব দুঃখীদের সেবা দেন। যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের সুচিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকি। যেমন আর্থিক সহযোগিতা ও পরিবহন দিয়ে সহযোগিতা। আমার মায়ের স্মৃতির রক্ষার্থে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠান থেকে পঙ্গু লোকদের হুইলচেয়ার দিয়ে সহযোগিতাসহ অসহায় ও গরীবদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ জানান, প্রায় ১৫ বছর যাবত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কারণে এলাকার মানুষের প্রচুর উপকার হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও উপদেষ্টা আহসান হাবীবের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই প্রতিষ্ঠান। সকলের সহযোগিতায় ইনশাল্লাহ আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (উপ-সচিব) আহসান হাবীব বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই দেখে আসছি, এ এলাকার মানুষ কত কষ্ট করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা সদর, জেলা সদর ও বিভাগীয় জেলা সদরে যায়। সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তখন থেকেই ভেবেছিলাম কর্মজীবনে এসে গরীব ও অসহায়দের চিকিৎসার জন্য এধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। মহান আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা আন্তরিকতার সাথে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি মাঝে মাঝে এলাকায় এলে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড দেখে মুগ্ধ হই। আশা করি সকলের সহযোগিতা পেলে জনগণের সেবার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এলাকার অসহায়, দরিদ্র ও দুঃস্থ মানুষের সেবা করে যেতে চায়। আগামীতে সাধ্যমত মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবো ইনশাআল্লাহ।