নওগাঁয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভুয়া কাবিনানামা ও হলফনামা দেখিয়ে স্ত্রী বলে দাবি করে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মাহমুদুননবী বেলাল (৪৪) নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক তরুণী। শুক্রবার নওগাঁ সদর মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। মামলায় মাহমুদুননবী বেলালসহ তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওই তরুণী মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত মাহমুদুননবী বেলাল নওগাঁর মান্দা উপজেলার বৈলশিং গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন, নওগাঁ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিয়ে রেজিস্ট্রার কাজী রফিকুল ইসলাম ও নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের বাসিন্দা লুৎফর রহমান।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী (২৬) নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা। মাহমুদুননবী বেলাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই তরুণীর বাবাকে সহযোগিতার নামে তাঁর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। বাবার সঙ্গে সখ্যতার সূত্র ধরে বেলাল ওই তরুণীর বাড়িতে মাঝে মাঝে যাতায়াত করতেন। গত ৫ মে ওই তরুণীর বাড়িতে এসে কাজী রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর করা একটি বিয়ে রেজিস্ট্রির কাবিননামা ও নওগাঁ নোটারি পাবলিকে সম্পন্ন একটি হলফনামা দেখিয়ে বেলাল ওই তরুণীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেন। কিন্তু ওই তরুণী এই বিয়ের কাবিননামা ও হলফনামা ভুয়া বলে দাবি করে তাঁর সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানালে বেলাল তাঁর সঙ্গে আসা সন্ত্রাসী লোকজন দিয়ে তাঁকে নিজের বাড়িতে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই ঘটনার পর ওই তরুণী জালজালিয়াতির করে ভুয়া কাবিননামা, নোটারি পাবলিকের হলফনামা তৈরি, প্রতারণা এবং বেআইনীভাবে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা’। তিনি বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ একজন মানুষ। বেলাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জমিজমা সংক্রান্ত কাজ সহ বিভিন্ন সহযোগিতার কথা বলে তাঁর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাঁর সঙ্গে কোনোদিনই আমার গভীর কোনো সম্পর্ক ছিল না। একদিন হঠাৎ করে বেলাল কাবিননামা ও এফিডেফিটের (হলফনামা) কাগজ দেখিয়ে আমাকে তাঁর স্ত্রী বলে দাবি করেন এবং জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।’
ওই তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের নামে আমি প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে দিয়েছি। বেলাল এটা জানতে পেরে ওই সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ভুয়া কাবিননামা ও হলফনামা দেখিয়ে আমার মেয়েকে তাঁর স্ত্রী বলে দাবি করছেন। টাকার লোভে বিয়ে রেজিস্ট্রির কাজীসহ অন্যরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। বেলালসহ ওই প্রতারক চক্রের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুননবী বেলাল দাবি করেন, ‘ওই মেয়ের সম্মতিতেই তাঁকে বিয়ে করেছেন। এখন পরিবারের চাপে সে বিষয়টি অস্বীকার করছেন। এজন্য আমি আদালতে স্ত্রী উদ্ধারের জন্য একটি মামলাও করেছি। ওই মেয়ের বাবা তাঁকে সম্প্রতি কিছু জমি লিখে দিয়েছেন সেখানে তাঁর স্বামী হিসেবে আমার নাম রয়েছে। সকল বৈধ কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে নওগাঁ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হক বলেন, ভুয়া কাবিনে স্ত্রী বলে দাবি করার অভিযোগে নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ এলাকার এক তরুণী একটি মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।