জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা এলাকার সনাতন পরিবারের এক ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল কারিগরি শাখা) থেকে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে কলেজে ভর্তি হতে না পারায় রাতের আঁধারে সড়কে দাঁড়িয়ে ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ওই ছাত্র। এমনি অবস্থায় পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাইদুল হক আত্মহত্যার বিষয়টি বুঝতে পেড়ে ওই ছাত্রের প্রাণ বাঁচান। ওসির এমন মানবিক এবিষয় টি জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছেন ওসি মো. জাইদুল হক। এক ছাত্রকে প্রাণে বাঁচালেন ওসি এই বিষয়টি ফেইসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হলে জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে তা জানতে ছুটে জান পাঁচবিবি থানায়। থানায় গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় ভারত সীমান্তবর্তী পাঁচবিবি উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাতের বেলায় ওই পথে টহল দিচ্ছিলেন পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহিদুল হক। দূর থেকে গাড়ির আলোয় দেখতে পান কেউ একজন ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। তখন ওসি দ্রুত তার পুলিশ ভ্যান গাড়িটি নিয়ে ওই ছাত্রের সামনে গিয়ে দাঁড় করিয়ে ওসি গাড়ি থেকে নেমে ওই ছাত্রকে রাস্তার পাশে নিয়ে গিয়ে তার প্রাণ বাঁচান। ওই ছাত্রের মা-বাবা অশ্রু ভেজা কণ্ঠে বলেন, এইতো কিছু দিন আগে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে আমার ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষায় এ-প্লাস পেয়ে পাশ করেছে। ছেলের পাশের খবর শুনে বুকটা আনন্দে ভরে গেলেও অর্থের অভাবে ছেলেটিকে কলেজে ভর্তি করে দিতে না পারার দুঃখে আমরা হতাশায় দিন পার করছিলাম। ঘটনার দিন ছেলে এসে বললো মা আমি কলেজে ভর্তি হব টাকা দিবে না? তখন আমি একটু রেগে উঠেই বলেছিলাম, তোর পড়শোনা করা লাগবিনা, তুই কাজ কাম করেক। তোকে আর পড়াশোনা করা লাগবেনা গরীরের জন্য লেখাপড়া নয়। এরপর ছেলেও মন খারাপ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাতের বেলায় কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। ওই রাস্তা দিয়ে পাঁচবিবি থানার (ওসি) মো. জাইদুল হক যাওয়ার সময় আমার ছেলের প্রাণ বাঁচায় এবং পরের দিন সকালে আমাদের থানায় দেখা করতে বলে। সকালে থানায় গেলে আমাদের নাস্তা পানি খাওয়াইয়ে বলেন আপনাদের ছেলের কলেজের ভর্তি খরচের দায়িত্ব আমি নিলাম। এই শুনে চোখ দিয়ে আমাদের আনন্দের জ্বল চলে আসে। ভগবান যেন মানবিক এই ওসির সর্বক্ষণ ভালো করুক। আমাদের ছেলেটি এখন কলেজে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছেন। সেদিন রাতে পাঁচবিবি উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বাগজানা এলাকায় টহলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই গাড়ির আলোয় দেখতে পাই কেউ একজন ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। তখন আমার গাড়ির চালককে দ্রুত গাড়ি চালাতে বলি আর অবশেষে ছেলেটার সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করালে ছেলেটি প্রথমে ভয় পায়।
ওসি আরও জানান, পরে ছেলেটির কাছ থেকে আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে সে বলে, এবছর জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছে, কিন্তু পরিবারের অভাবের কারনে সে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। এ কারণে হতাশায় নিজের জীবন শেষ করে দিতে চায়। রাতের বেলায় ছেলেটাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সকালে মা-বাবাকে নিয়ে থানায় আসতে বলি। এদিকে, তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জয়পুুরহাট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম স্যার’কে সকল ঘটনা জানালে তিনি দ্রুত ওই ছেলেটার কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই ছেলেকে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছি। এমনকি এখন থেকে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব আমরা পাঁচবিবি থানা পুলিশ নিয়েছি।