দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আট দিন আগে (২৯ ডিসেম্বর-শুক্রবার) মারা গেলেন নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে তার মৃত্যু হয় বলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা নিশ্চিত করেন। নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র বাতিল করায় হাই কোর্টে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছিলেন পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আমিনুল হক। বৃহস্পতিবার তাকে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তার পরদিনই শুক্রবার মৃত্যু হয় এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী এ আসনের নির্বাচন বাতিল হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন নওগাঁ-২ আসনের জন্য পরে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করবেন।
নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু না পেয়ে পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করলে, পরে নির্বাচন কমিশনেও সে সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। আমিনুল হক তখন হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি করে গত বুধবার হাই কোর্ট আমিনুল হকের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে। এরপর বৃহস্পতিবার নওগাঁর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাকে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান জানান। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য হাই কোর্টে মামলা করার পর থেকে ঢাকাতেই ছিলেন আমিনুল হক। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাতে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোর ৫টায় মৃত্যু হয় তার।
স্বজনরা জানিয়েছেন, ডায়াবেটিস আর হৃদরোগে ভুগছিলেন আমিনুল হকম বয়সের কারণে আরো কিছু জলিতা ছিল। শুক্রবার বিকালে আমিনুল হকের মরদেহ নওগাঁর নজিপুরে তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। জানাজা শেষে সন্ধ্যায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নওগাঁ-২ আসনে আমিনুল হক ছাড়াও তিনজন প্রার্থী আছেন। তারা হলেন-আওয়ামীলীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি শহীদুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির তোফাজ্জল হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা আখতারুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশন সচিবালের উপ-সচিব মো. আতিউর রহমান বলেন, আমিনুল হকের মৃত্যুর খবর তারা শুনেছেন। এখন ওই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। তার নোটিস পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করবেন। ফলে ৭ জানুয়ারি ভোট হবে ২৯৯ আসনে। পরে নওগাঁ-২ আসনের জন্য নতুন করে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী, এখন যারা বৈধ প্রার্থী আছেন, তাদের আর মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে না। তাদের সঙ্গে নতুন প্রার্থীও যোগ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ও এক প্রার্থীর মৃত্যুতে ২৯৯ আসনে ভোট হয়েছিল। পরে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হয় ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি। তার আগে ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনেও ভোট হয় ২৯৯ আসনে। গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলামের মৃত্যুর কারণে নোয়াখালী-১ আসনে নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর হয়নি। পরে ওই আসনে নির্বাচন হয় ১২ জানুয়ারি।