চাঁপাই-সোনামসজিদ মহাসড়ক প্রয়োজন চারলেনে উন্নিত করণ। অপ্রশস্ত সড়কে পরিবহণে ভোগান্তি ঈদে ঘরে ফেরা সাধারণ মানুষের। অতিরিক্ত যানবাহনে বেসামাল হয়ে পড়ছে মহাসড়ক। মহাসড়কের দূরবস্থা যানবাহনে অতিরিক্ত লোড। তবে, এসবের দিকে খেয়াল রাখার যেন কেউ নেই। দীর্ঘদিনের দাবী ও প্রয়োজন অবশেষে আলোর মুখ দেখলেও জেলাবাসীর কাঙ্খিত আশা পুরন হচ্ছে না। চারলেন না হয়ে, হচ্ছে রাস্তা প্রসস্তকরণ। তারপরও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার বিশিষ্টজনেরা। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, প্রশস্তকরনে নেয়া প্রকল্প বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বা অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, প্রায় ৩৬ কিলোমিটারের রাস্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোড থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত। এ সড়কটি দখল করে আছে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা, অটো, সিএনজি, ভুটভুটি, নসিমন, করিমনসহ ছোট যানবাহন। আর জেলায় অতিরিক্ত মোটরসাইকেল। ব্যস্ততম এই সড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো, অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ওভার লোড নিয়ে যানবাহন চালানোসহ নানা কারণে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, পঙ্গুত্বও বরণ করছে। তাছাড়া সড়কটির পাশেই আছে কয়েকটি হাট-বাজার। জেলার ট্রাফিক বিভাগ সাধ্যমত চেষ্টা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্ত রাস্তা এবং অতিরিক্ত জানবাহণের কারণে তেমন একটা সুফল বয়ে আসছে না।
অন্যদিকে, সড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্ত (সরু) হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যগুলো গন্তব্যে পৌঁছছে ভোগান্তি হয়। গতিবিধি না মেনে যান চলাচল করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটিতে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা ঘটায় চার লেন করার দাবি তুলেছেন জেলাবাসী। সড়কটি চাল লেন করা হলে যেমন পণ্যবাহী ট্রাক যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে, ভোগান্তিও কমবে, অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্য পরিবহনের এটিই একমাত্র সড়ক। সারাদিনে স্থলবন্দর থেকে সাড়ে ৩’শ এর বেশি ট্রাক আসে। সড়কটি ৬ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত। এ সড়কের প্রশস্ত কম হওয়ায় ট্রাক চালকদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। বাধ্য হয়ে কম গতিতে ট্রাক চলাতে হয় চালকদের। ফলে পচনশীলপণ্য নিয়ে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌছতে পারেনা ট্রাকগুলো। অপ্রশস্ত সড়কের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক চালক জানান-চাঁপাইনববগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এ সড়কে বেশি অটো, রিক্সা, সিএনজি, ভুটভুটি, নসিমন, করিমন, বেশি হওয়ায় আমাদের ট্রাকগুলো খুব ধীর গতিতে চালাতে হয়। ফলে সঠিক সময়ে আমরা পণ্যগুলো দিয়ে আসতে পারছিনা। কাঁচা পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করলেও মাঝে মাঝে বাজার ধরতে পারিনা। পণ্যের মালিকের কাছে কথা শুনতে হয়। আরেক ট্রাক চালক বলেন, এ সড়কের পাশে বারঘোরিয়া বাজার; ফিল্ডের হাট, রানিহাটি বাজার, ছত্রাজিতপুর, ছোটচক আমবাজার, কানসাট আম বাজার আছে। এছাড়াও রাস্তার জমিতে দোকানপাট নির্মাণ করায় মানুষ সমস্যার মধ্যে চলাফেরা করছে। ফলে অহরহই ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। এছাড়াও অটো চালকরা যাত্রী উঠানোর জন্য যেখানে সেখানে দাঁড় করায়, ট্রাকের গতি একটু বেশি থাকলেই অটোতে ধাক্কা লাগে। নিজেকে খুব খারাপ লাগলেও, তখন আর কিছুই করার থাকেনা।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সভাপতি শফিকুল আলম ভোতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আর শিবগঞ্জ পাশাপাশি উপজেলা। এ দুই উপজেলায় জনসংখ্যা বেশি, পাশাপাশি শিবগঞ্জে একটি স্থলবন্দর আছে। একদিকে, মানুষ যাতায়াতের জন্য ছোট ছোট যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক যাতায়াত করছে। সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় সড়টিকে দূর্ঘটনা বাড়ছে। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি চার লেন করা হলে সড়ক দূর্ঘটনার পাশাপাশি আমদানি পণ্য পরিবহন করা সহজ হবে। শুধু চার লেন করলে হবেনা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও জনগণকে সচেতন হতে হবে। সড়ক প্রশস্তকরণ বিষয়ে তিনি বলেন, চারলেন করার দাবী থাকলেও সড়কটি প্রশস্তকরণ করা হবে বলে জেনেছি। তবে বিস্তারিত বলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ হামিদুল ইসলাম জানান, চাঁপাই-সোনামসজিদ মহাসড়ক চারলেন হলে অনেকটায় সুবিধার হতো। হয়তো সেটা বাস্তবায়ন হবে একসময়। জেলার মানুষদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করছেন উর্ধ্বতন নীতিনির্ধারকরা। রাস্তা প্রশস্তকরণ এর বিষয়টি আমাদের বিষয় নয়, তারপরও এই ব্যস্ততম রাস্তা প্রশস্তকরণ হলেও অনেকটায় সুবিধা হবে। আমাদের জায়গা থেকে যতটা সম্ভব মানুষের সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলার ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক এর সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হলো।