গত কয়েকদিন ধরে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। তাপদাহে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অবস্থাও করুন। কাঠফাটা রোদে ঘর থেকে বের হওয়া মুসকিল হয়ে পড়েছে। সেখানে শিশুরা এই রোদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা করা অত্যন্ত দুস্কর হয়ে পড়বে। দেশের বেশিরভাগ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এই অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষজনকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও মাদ্রাসার ছুটির তালিকা অনুযায়ী মার্চ মাসের ১০ তারিখ থেকে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় এক মাসের ছুটি শুরুর কথা ছিল। তবে শিখন ঘাটতি পূরণে প্রাথমিকে ১০ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি মাধ্যমিকে ১৫ দিন কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে রোজার মধ্যেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট হলে দফায় দফায় সিদ্ধান্ত আসতে থাকে। পরে আপিল বিভাগ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি সমন্বয় করে রোজায় ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার পক্ষে রায় দেন। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ দিন ছুটি কমানো হয়। এদিকে রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুক্রবার পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৭ দিন বাড়ানোর জোর দাবি জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরাম সভাপতি।
ঈদের ছুটি শেষে রোববার (২১ এপ্রিল) থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিলো। এদিকে, অভিভাবক ঐক্য ফোরাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও সাত দিন বাড়ানোর দাবি জানালে চলমান তীব্র তাপদাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শনিবার (২০ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরসহ (মাউশি) প্রতিটি দফতরের পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগামী ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো। এর আগে, আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপদাহের (হিট অ্যাল্যার্ট) পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। উল্লেখ্য, পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটি সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামীকাল রোববার থেকে ক্লাস ফেরার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। কিন্তু কয়েকদিন ধরে দেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে করণীয় ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে সেদিনের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দাবদাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী সাতদিন বন্ধ রাখার দাবি জানায় অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। এমন অবস্থার মধ্যে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।