শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রনয়ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন, বিপনন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। সভায় জেলার আম পরিপক্ক হওয়ার পরই বাজারজাত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ায় এবছর কোন আম ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়নি। চাষী ও ব্যবসায়ীরা আম গাছে পাকলেই সঠিক সময়ে আম বাজার করতে পারবে। এ সময় সভায় স্বল্প মূল্যে রেলের মাধ্যমে আম পরিবহন, বাজার ব্যবস্থা পর্যালোচনা, আম বিক্রির সময় ওজন জটিলতা এবং বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পরিবহনে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে জেলার আম পরিপক্ক হওয়ার পরই বাজারজাত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার, আম উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মোখলেসুর রহমান, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের চীফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস, রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সহ-সভাপতি মসিউল করিম বাবু, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাসুম আলী, কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম মানিক, গোমস্তাপুর উপজেলা আম ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মোঃ মাইনুল বিশ্বাস, কানসাট আম আড়ৎদার সমিতির সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু, আমচাষী ইসমাইল খান শামীমসহ বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। এসময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে জেলার আম সহজে পরিবহণ ও বাজারজাতকণের জন্য প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে ‘মাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের মাধ্যমে আম পরবহনের জন্য আহবান জানান জেলা প্রশাসক। সভায় জেলা প্রশাসক আরও জানান, আগামী ১০ জুন (সম্ভাব্য) থেকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৭৫ লক্ষ ৮৯হাজার ৮২৫ টি আমগাছে আম চাষ করা হচ্ছে। এবছর মুকুল কম আসায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারনে আমের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা না বাড়িয়ে গত বছরের ন্যায় মোট ৪ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। সভায় সমন্বয়ের ভিত্তিতে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো যেন ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনে আম পরিবহনের জন্য এগিয়ে আসে, সেজন্য সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে। সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে একই খরচে আম পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এনিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে সীদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক জানান, আম বাজারে চাঁদাবাজি কঠোরভাবে দমন করা হবে। সড়কে আম পরিবহনে কোন ধরনের হয়রানি সহ্য করা হবে না। এমনকি কুরিয়ার সার্ভিস বা অন্যান্য পরিবহনে বেশি ভাড়া নিলে বা সেবাগ্রহীতার সাথে দুর্ব্যবহার করলে ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, কুরিয়ার বা অন্যান্য পরিবহনে আম পাঠানোর সময় জেলা থেকে যাতে কোন ধরনের অবৈধ কেনোকিছু যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সকল আম ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়াও অপরিপক্ক আম পেড়ে বাজারজাত করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সর্বপোরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুমিষ্ট আম সারাদেশসহ বিদেশে ভালোভাবে রপ্তানী বা বাজারজাত করা যায়, সেজন্য জেলার আম চাষী, ব্যবসায়ী, সংশ্লিষ্টরা ও মিডিয়াকর্মীদের আন্তুরিক সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। সভায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বানিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ওয়াগন এর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হতে পারে। আম পরিবহনের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে ট্রেনের স্টপেজ ও পরিবর্তন বা বৃদ্ধি করা যাবে। এই ট্রেনে আম ছাড়াও বিভিন্ন ফলমূল ও কৃষিপন্য পাঠাতে পারবেন কৃষক ও উদ্যোক্তারা।
