ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া তিন আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন, আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল, সিলিস্তা রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। শুক্রবার (২৪ মে) বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১২ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এজাহারে বলা হয়, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই। গত ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লিখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেবো।’ এছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা এটি করে থাকতে পারে। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনও সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।
এদিকে, এমপি আনার কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তার একটি সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, এমপি আনার দুইজনের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু জীবিত আর বের হননি। ১৩ মে দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে সঞ্জীবা গার্ডেনের আলোচিত সেই ফ্ল্যাটে ঢোকেন এমপি আনার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিমুল ভুঁইয়া ও তার সহযোগী ফয়সাল। এমপি আনার বেশ শান্তশিষ্টভাবে দরজার বাইরে র্যাকে তার জুতা রাখেন। পরে ফ্ল্যাটে ঢোকেন তিনি।
কয়েক ঘণ্টা পর বের হয়ে আসেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, হাতে ছিল একটা লাগেজ। এরপর তার সঙ্গে পলিথিনের ব্যাগ হাতে বের হন আরেকজন। বের হওয়ার সময় শিমুল দরজা দিয়ে লক করে দেন। লিফট দিয়ে নেমে তারা বের হয়ে যান। অন্যদিকে, আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদকে আদালতে তোলার পর শুক্রবার (২৪ মে) কলকাতার বারাসাত আদালত তাকে ১২ দিনের রিমান্ডে পাঠান। গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিহাদ জানিয়েছে-আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে জিহাদ। পরে মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেওয়া হয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেওয়া হয়।