ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২ কোটি ৬৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার মোবাইল ফোন টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাট অনেকটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, রবিবার মধ্যরাত থেকে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশালের অধিকাংশ গ্রাহক এবং ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ কখন স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছে না বিদ্যুৎ অফিস। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবের সময় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে অনেক এলাকা ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা যাবৎ বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। ঝড় পুরোপুরি থেমে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছেন পল্লীবিদ্যুতের কর্মীরা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে গেছে। যার ফলে মোবাইল যোগাযোগ বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে টাওয়ারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। অপারেটরদের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব টাওয়ারগুলো চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’ লণ্ডভণ্ড করেছে উপকূল, ভেঙ্গেছে বাঁধ, প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম, পানিতে ডুবেছে বিভিন্ন ফসল, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গাছপালা, বাড়িঘর, বিভিন্ন স্থাপনার। ঢাকার উপরও আঘাত হেনেছে ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’। ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’ এর প্রভাবে বৃষ্টিতে বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এবছর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এমনিতেই আমের ফলন কম, তার উপর চরম তাপদাহ, এখন ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’। ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’ এর প্রভাবে ঝরে পেড়েছে অনেক আম। এমনিতেই আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাব, তারউপর আবার ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’ অনেক ক্ষতি করলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রবল শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। রোববার দিবারাত পৌনে নয়টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। এ সময় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি। সঙ্গে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হলে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপসানালয়, মাছের ঘের ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডব রাতে তেমনটা বোঝা না গেলেও সকাল হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঝড়টির তাণ্ডবলীলা স্পষ্ট হয়। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাপানিতে। ঝড়ে উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে লাখো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।