শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মন্তব্যের প্রতিবাদে’ ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে সরকার সরকার’-স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা রাত দেড়টা পর্যন্ত মহাসড়কে অবস্থান করেন। এরপর আস্তে আস্তে হলে ফিরে যান। রোববার বিকালে বঙ্গভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।” এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়-‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ছাত্রীদের হলের গেটে তালা মারা থাকলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে প্রহরীরা তালা খুলে দেন। পরে মেয়েরাও রাস্তায় বের হয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছে ভরসা রেখেছিলাম। কিন্তু নির্বাহী বিভাগের প্রধান আজকে যে বক্তব্যটি দিয়েছেন সেটি আমাদের খুবই হতাশ করেছে। তারই প্রেক্ষিতে এখন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। তারা প্রথমে সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনা অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও পরে সংস্কারের দাবি তুলেছে।
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতিটি কর্মদিবসেই বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করায় যান চলাচলে তীব্র ভোগান্তি হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করলেও বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, একাধিক এলাকায় বাধাও দেওয়া হয়েছে। পরে এক আদেশে কোটা আন্দোলন নিয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সেই শুনানিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তবে শিক্ষার্থীরা সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটার বিষয়ে ফয়সালা চাইছেন, আর ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন। রোববার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেন। এতে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
