শষ্য ভান্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরে আবারও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে চালের বাজার। বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রায় সব রকম চালে কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা।পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি’র বস্তায় বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খাদ্য বিভাগ বলছে, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মনিটরিং টিম কাজ করছে। খুচরা ব্যবসায়িদের অভিযোগ, মিল মালিকদের কারসাজির কারণে আবারো অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে চালের বাজার। তবে, মিল মালিকরা বলছেন, প্রকারভেদে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। অন্যদিকে, কৃষকের অভিযোগ, আগে-ভাগে বিক্রি করে ফেলায় ধানের ন্যায্য দাম থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। উঠেনি তাদের উৎপাদন খরচ। প্রকারভেদে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। আর বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। চালের বাজারে ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ ক্রেতা-নিম্ন আয়ের মানুষ। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে। সেই সাথে চালের বাজারে উর্ধ্বগতি এজন্য বেশ বেকায়দায় পড়েছেন তারা। দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় চালের আড়ত বাহাদুর বাজার। সেখানে এক সপ্তাহ আগে দিনাজপুরে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে,এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।গুটি স্বর্ণ গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা কেজি,বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। আঠাশ চাল ছিল ৫৫ টাকা কেজি,এখন তা ৬০ টাকা। ঊনত্রিশ চাল গত সপ্তাহে ছিল ৫২ টাকা কেজি, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়।বস্তাপ্রতি ৫০ কেজি চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ি ও আড়তদাররা দুষছেন মিল মালিকদের। বলছেন, আমরা মিল গেট থেকে যে দামে চাল কিনছি,সে দামেই বিক্রি করছি। মিল মালিকদের কারসাজির কারণে আবারো অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে চালের বাজার।
মিল মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। প্রকারভেদে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। এতে তাদের করার কিছুই নেই। মিল মালিকরা নিয়ম মাফিক যে ধান-চাল মজুত করার কথা- সেটাও অনেকে পারছেনা। কিন্তু,অপ্রত্যাশিতভাবে অন্যকেউ ধান-চালের মজুত করছে। ধানের সংকট এবং বেশি দামে তাদের ধান কিনতে হচ্ছে। ধানের অভাবে অনেক মিলে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। ধানের বাজার কম হলে চালের দামও কমবে। চালের দাম নির্ভর করে ধানের দামের উপর। বিষয়টি খতিয়ে দেখে মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন।
অন্যদিকে, কৃষক বলছেন, আগে-ভাগে বিক্রি করে ফেলায় ধানের ন্যায্য দাম থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। উঠেনি তাদের উৎপাদন খরচ। অথচ, এখন ধান-চালের দাম বাড়েছে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন,
দিনাজপুর জেলাতে অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ/২০২৪ অভিযান চলছে। কৃষকের কাছে ধান এবং তালিকাভুক্ত মিলারদের কাছে চাল ক্রয় করা হচ্ছে। ৭ মে শুরু হয়েছে এবং চলবে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার দিনাজপুরের চালকল মালিকদের কাছ থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার টন চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ১৭ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ধান-চাল সংগ্রহের পাশাপাশি চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে। কারসাজির মাধ্যমে কেউ যাতে চালের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য এই বিশেষ টিম কাজ করছে।
দিনাজপুর জেলায় প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। তারপরও ধান-চালের কৃত্রিম সংকট এজেলায়। এবিষয়ে কঠোর নজরদারি ও দোষিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।