চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের নাধায় এলাকায় এক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধীটি উচ্ছেদ করে পুকুরে পরিনত করার ষড়যন্ত্র করছে একটি জালিয়াত চক্র। এঘটনায় স্থানীয়রা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এই জালিয়াত চক্রের হাত থেকে এই বীর সন্তানের সমাধী রক্ষার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। জানা গেছে, গোবরাতলা নাধাইকৃষ্ণপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আদীবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী লালু মারর্তীর মৃত্যু হয় ২০১৪ সালের ১১ মার্চ। উপজেলা প্রশাসন মৃত্যু সংবাদ পেয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে জান। পরে এ বীর মুক্তি যোদ্ধাকে উত্তর মোহনপুর মৌজায় সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয় এবং কবরটির চারি পাশ ইটের গাঁথুনি দিয়ে বাঁধাই করে ও নাম ফলকও করে দেয়া হয়।
সেখানে মুক্তিযোদ্ধা লালু মরর্তীর কবরসহ খাস জমি রয়েছে ৬.১৪ (একর)। এ জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভোগ দখল করছেন গোবরাতলা ইউনিয়নে দিয়াড় ধাইনগর গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দীনের ছেলে ও মেয়েরা। দেশের এ বীর সন্তানের সমাধির স্থান থেকে প্রায় একশত ফিট দুরুত্বের একটি ছোট্ট পুকুর ছিলো আর সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্রমে ক্রমে কেটে সে পুকুর এখন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার কবর পাশে এসে ঠেকেছে। এ পুকুর খননের কারনে কবরটি বর্তমানে ফাটল ধরে ভেঙ্গে পড়েছে। রক্ষার ব্যবস্থা না নেয়া হলে মুক্তিযোদ্ধার কবরটি নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে এবং পুকুরে পরিনত হবে এই সমাধীটি। দেশের এ বীর সন্তানের কবরের ভিতরে বর্তমানে কুকুরের বসবাস। জালিয়াত চক্রের এমন অ-মানবিক যড়যন্ত্রের চক্রান্ত এলাকার সচেতন মানুষ ধরতে পেরে গণমাধ্যম কে খবর দিলে ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ এর প্রতিনিধি তথ্য অনুসন্ধানে নামেন।
নাধাই কৃষ্ণপুর গ্রামের মনিকা সরেনসহ আরো কয়েক জনের কাছে জানতে পারে যে, আসলে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা লালু মারর্তীর সমাধী স্থলটি বাংলাদেশ সরকার বাহদুরের কিন্ত এ জালিয়াতি চক্র বিভিন্ন চক্রান্ত করে ভূয়া রেকর্ডের মাধ্যমে মালিক হলেও সেটি পরবর্তীতে আদালতে মামলা হয়। অতিরিক্ত (২)সহকারী জজ আদালতের মামলা নং-৩০/১৯৯৩(অঃ প্রঃ) মামলায় কাগজপত্র ও সাক্ষ্য প্রমানে প্রমানিত হয় উক্ত জমির প্রকৃত পক্ষে মালিক বাংলাদেশ সরকার ভোগ দখলে আছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনও ওই সরকারী জমি দখল করে ভাগ করছেন দিয়াড় ধাইনগর গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দীনের ছেলে ও মেয়েরা। এব্যাপারে মৃত মমতাজ উদ্দীনের বড় ছেলে মোঃ সাহাবুদ্দীনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে দ্বায়ী করে বলেন, আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি সরকার জবড় দখল করার পায়তারা করছে।
সাহাবুদ্দীনের এমন কথা শুনে তার স্বপক্ষে কি কাগজ আছে দেখতে চাইলে ৪-৫ দিন পরে দেখার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত কাগজ দেখাতে রাজি হননি বা পারেন নি। এলাকাবাসীর ধারণা, ভূয়া বা জাল জালিয়াতি কাগজের কারণেই তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে রাজি হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিটের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ খাইরুল ইসলাম, আদীবাসী মনিকা সরেন, মোঃ ইমরান হোসেনসহসংশ্লিষ্ট প্রসাশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে যারা এ দেশ স্বাধীন করলো এবং লাল সবুজের মানচিত্র (পতাকা) এনে দিলো, আজ তার কবরটি এমন বেহাল দশা হলে আমরা সাধারণ মানুষ আমাদের কি হতে পারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা লালু মারর্তীর কবরটি সরকারের প্রতিনিধি যারা আছেন, তারা যেন এটিকে দ্রুত সংস্করণ করেন। এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রওসন আলী জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা লালু মারর্তীর কবরটি উচ্ছেদ করে জায়গা বে-দখলের খবর পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।