1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
জয়পুরহাটে ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি ‘তালাক’ ॥ প্রতিদিনই গড়ে ১০টি তালাক - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২দিনে ডুবে এক যুবক ও ৩ শিশুর মৃত্যু এবছর মদিনায় প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু সরকারের ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্বের কারণে বাংলাদেশে এত উন্নয়ন-ওবাইদুল কাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এসএসসি’তে প্রথম শিবগঞ্জের নাঈম চাঁপাইনবাবগঞ্জ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এর কমিটি অনুমোদন রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন আরএমপি ডিবি’র অভিযানে ৭৪০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার-৬ গোমস্তাপুরে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত ভিসা অনিশ্চয়তায় ৪ হাজারের বেশি হজযাত্রী রংপুরে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালিত

জয়পুরহাটে ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি ‘তালাক’ ॥ প্রতিদিনই গড়ে ১০টি তালাক

নিরেন দাস-জয়পুরহাট
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩
  • ১১২ বার পঠিত

জয়পুরহাটে ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি ‘তালাক’ ॥ প্রতিদিনই গড়ে ১০টি তালাক

জয়পুরহাটে এখন ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির নাম ‘তালাক’। গত এক বছরে প্রত্যেক দিনে গড়ে ১৪টি বিয়ে নিবন্ধিত হলেও ঘটেছে ১০টি তালাকের ঘটনা। অর্থাৎ মোট বিয়ের ৭১ শতাংশ তালাকের ঘটনা ঘটছে। তালাক বেড়ে যাওয়ার পেছনে, যৌতুক, অভাব-অনটন, বেকারত্ব, পরকীয়া, সন্দেহ, মানসিক ও শারীরিক অবসাদ, দাম্পত্য কলহ, মুঠোফোন ও ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার ছাড়াও নানামুখী চাপের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন এবং যোগাযোগ কমে যাওয়াকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে চলছে তালাকের পর্ব। সেখানে তালাক দেওয়া হচ্ছে রামনগর গ্রামের আসাদুলের মেয়ে ফারজু আক্তারকে। প্রায় ৭ বছর আগে ফারজুর সাথে সামাজিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী মালীদহ গ্রামের সাবদুল ইসলামের ছেলে সাদেকুলের সাথে। এতদিন সংসার করার পর সাদেকুল সৌদি আরবে গিয়ে সেখান থেকে বিনা দোষে তালাকের পরওয়ানা পাঠায় ফারজুকে। বিনা অপরাধে তালাকের বলি ফারজু এভাবে চোখের পানিতে বুক ভাসালেও রক্ষা হয়নি তার। আর ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য মুশফিকুর রহমান মুশফিক।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বনথুর গ্রামের অন্যের জমিতে আশ্রিত দরিদ্র দাদা-দাদির সাথে থাকেন রোজী সুলতানা। ছনের একটা ঘরে দাদা-দাদী আর ৬/৭ বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে থাকেন তালাক প্রাপ্তা রোজী। প্রেম না হলেও রোজীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে দাদা-দাদী হাতে পায়ে ধরে রাজী করিয়ে পরিচয় গোপন করে ২০১৬ সালে রোজীকে বিয়ে করেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার বাসিন্দা শাহাপুর গ্রামের সামসুল হকের ছেলে মনোয়ার। দরিদ্র ও অচল প্রায় দাদা-দাদীর পক্ষে মনোয়ার সম্পর্কে খোঁজ করারও সামর্থ্য ছিল না। বিয়ের কিছু দিন পর তার আগের সংসার আছে জানতে পারে রোজী। যৌতুকের চাপ, শারীরিক নির্যাতনসহ নানা অত্যাচার সয়ে গেলেও এক তরফা গোপন তালাক দেন স্বামী মনোয়ার। ৬/৭ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে একরারও খোঁজ নেননি মনোয়ার। ফলে মায়ের সাথে কন্যারও ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারাছন্ন।
এদিকে, একই উপজেলার হাতীগাড়া গ্রামের ক্ইনুর মিয়ার মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন শার্শ্ববর্তী উপজেলার বাঁশথুর গ্রামের বিত্তবান তৈবুর রহমানের ছেলে মুজাহিদ হোসেন। এখন ৬/৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রেখেই তালাক দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করেন। এখন সাবিনা ইয়াসমিন উদ্বিগ্ন অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সূত্র ধরে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও স্বাভাবিক কারণে কেউ গা ঢাকা দেন, আবার কেউ কথা বলতে রাজী হননি।
শুধু ফারজু, রোজী, আর সাবিনার নয়, এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে জয়পুরহাটে। জেলা রেজিস্টার কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৫ হাজার ২৬০টি বিবাহ নিবন্ধিত হয়েছে। একই সময়ে আবার ৩ হাজার ৭৩৬টি তালাক হয়েছে। এর মধ্যে ছেলের পক্ষ থেকে তালাক ৭৭৩টি, মেয়ের পক্ষ থেকে তালাক ১ হাজার ৪৭১টি এবং উভয়পক্ষে সম্মতিতে তালাক হয়েছে ১ হাজার ৪৯২টি। অর্থাৎ ছেলেপক্ষ থেকে তালাকের প্রায় দ্বিগুণ তালাক হয়েছে মেয়ের পক্ষ থেকে। ২০২২ সালের ১২ মাসে বিবাহের তুলনায় ৭১ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। আর ২০১৯, ২০২০ বা ২০২১ সালেও এর পরিমাণ ছিল ৪৫ থেকে ৫১ শতাংশ। তাই গত এক বছরের বিবাহ বিচ্ছেদের হার এ জেলার জন্য উদ্বেগজনক বলে জানান জেলা রেজিস্টার শরীফ তোরাফ হোসেন।
তালাকসহ নারী নির্যাতনের কয়েক’শ মামলা এখনো চলমান রয়েছে উল্লেখ করে শিশু ও নারী নির্যাতন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফিরোজা চৌধুরী জানান, উল্লেখিত সামাজিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আইনের কড়াকড়িসহ আদালতের মাধ্যমে কাউন্সিলিং বা উপযুক্ত পরামর্শ নিশ্চিত করা গেলে কমবে তালাকের ঘটনা। বিবাহ বিচ্ছেদের পর মানসিক ভারসাম্য হারানো ছাড়াও বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান শিকার হন সন্তানরা। ফলে আগামী প্রজন্ম সামাজিক অস্থিরতার কারণ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে এ সমস্যা লাঘবের দাবী জানান সমাজ সচেতনরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!