আলু উৎপাদনের ২য় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটেই প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলুর মূল্য ৫৫ টাকায় উঠেছে। এতে কৃষকরা খুশি হলেও দিশেহারা হয়ে পড়েছে বাজারে আসা ক্রেতারা। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী ও হিমাগার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বসার কথা জানালেন বাজার বিপণন অধিদপ্তর। জয়পুরহাটের নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড। সস্তা সবজি হিসেবে পরিচিত আলু আর এখন সস্তায় মিলছে না। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখীর বাজারে জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতি কেজি স্টিক আলু ৪০ টাকা, দেশি পাকড়ি আলু ৫০ টাকা ও ভাণ্ডারপুরের আলু ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর পর হিমাগারে ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি হলেও খুচরা বাজারে আসা ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় হিমাগার থেকে প্রয়োজনীয় আলু বের না করায় এমন সংকট তৈরি হচ্ছে-মনে করছেন ভোক্তারা। এক্ষেত্রে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ হিমাগার কর্তৃপক্ষ, মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের বর্তমান সময় পর্যন্ত হিমাগার থেকে অনেক বেশি আলু বাজারে ছাড়া হয়েছে। জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে প্রতি কেজি আলু পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। সেই আলু ঢাকায় পৌঁছাতে ক্যারিং খরচ আরও ৩ টাকাসহ ৩৩ টাকা পড়ছে। অথচ খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫৫ টাকার ওপরে। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সিগঞ্জে এবার আলু উৎপাদন কম হওয়ায় এবং অতি বর্ষায় রবি শস্য ক্ষতি হওয়ায় আলুর মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলছে ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইশরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে বেশি আলু খালাস হচ্ছে। অথচ হিমাগার কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা হচ্ছে। একই উপজেলার নর্থ পোল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মনোয়ারুল ইসলাম জানায়, এ বছর মুন্সীগঞ্জে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় জয়পুরহাট থেকে আলুর চাহিদা বেড়েছে। এছাড়াও অতি বর্ষায় রবি শস্য নষ্ট হওয়ায় অন্যান্য শাকসবজির দামও বেশি। যে কারণে আলুর ওপর প্রভাব পড়েছে। জয়পুুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। এরপরও বাজারে আলু না ছাড়লে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জয়পুুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয় সূত্র জানায়, জয়পুরহাটে এ বছর ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন আলু চাষ হয়েছে। যার মধ্যে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ১৯টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন আলু খালাস হয়েছে।