চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে কয়েক দফা নোটিশ দেয়া হলেও ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় নির্মিত “উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়” এখনো সরানো হয়নি। নোটিশ পাওয়ার পর স্কুলের জায়গায় নির্মিত অন্য দোকান ঘরগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিলেও আওয়ামীলীগ কার্যালয়টি সরানো হয়নি। এদিকে দলীয় কার্যালয়টি না সরানোর ফলে স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত কার্যালয়টি রাখার জন্য তারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। জানা গেছে, ১৯০৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে ০.৩৭ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় নাচোল ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। নির্মাণের প্রথম দিকে পুরো জায়গা জুড়ে ভবন না থাকায় এবং বিদ্যালয়ের আয়ের স্বার্থে আশির দশকে পূর্বদিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে মতি, সুরুজ আলী, আজহার আলী, স্বপনসাহাসহ ৮ ব্যক্তিকে মাসিক ভাড়ায় জায়গা ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়। শুরুর দিকে জায়গা ভাড়ার হার ছিল মাসিক ৩০ টাকা। পরে ওই ৮ ব্যক্তি স্কুলের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে জায়গার ভাড়া মাসিক ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। স্কুলের জায়গা ভাড়া নেয়া স্বপন সাহা তার ঘরটি ২০০৮ সাল থেকে নাচোল উপজেলা আওয়ামীলীগের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতে দেন।
তারপর থেকে প্রায় ১৫ বছর স্বপনসাহার কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষ জায়গার নির্ধারিত মাসিক ভাড়া বকেয়া রয়েছে বলে জানান। জানা গেছে, স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য গতবছর কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ছাড়ার জন্য ওই ৮ ব্যক্তিকে নোটিশ করে। কিন্তু কেউই নোটিশকে আমলে না নেয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত নভেম্বর মাসে চুড়ান্ত নোটিশ প্রদান করে। এরপর ৭ ব্যক্তি জায়গা ছেড়ে দিলেও স্বপনসাহা অর্থাৎ তার ঘরে থাকা নাচোল উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিস ছাড়েনি। শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ অফিস জায়গা না ছাড়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০ মাস ধরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে পারছেনা। উল্লেখ্য, নাচোল মধ্যবাজারে আওয়ামীলীগের দ্বিতল স্থায়ী কার্যালয় রয়েছে, যেটি ১০ম জাতীয় সাংসদ গোলাম মোস্তফা উদ্বোধন করেন। কিন্তু রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওই অফিসে যাননা এবং বিদ্যালয়ের জায়গার উপরে থাকা দলীয় কার্যালয়টি ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে জায়গা ভাড়া নেয়া নাচোল পৌর আওয়ামীলীগের ৭নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা বলেন, আমার নামে ভাড়া নেয়া জায়গাটি প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করি। এরপর থেকে আর কিছুই জানিনা। ১৫ বছরে বিদ্যালয়ের জায়গার ভাড়া পরিশোধ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাভলী ইয়াসমীন বলেন, কয়েক দফা নোটিশ দিলেও কেউ জায়গা ছাড়েনি। পরে চূড়ান্ত নোটিশ পাওয়ার পর সকল ব্যবসায়ী বিদ্যালয়ের জায়গা ছেড়ে দিলেও আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়টি সরিয়ে নেয়নি। তাছাড়া সবাই ভাড়া পরিশোধ করলেও দলীয় আওয়ামীলীগ অফিসের কাছ থেকে কোনো ভাড়া পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুলের জায়গা না ছাড়ায় বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত এবং খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা মালামাল নষ্ট হচ্ছে। নাচোল উপজেলা শিক্ষা অফিসার মৃনাল কান্তি সরকার বলেন, একাধিক নোটিশ প্রদান করলেও কার্যালয়টি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন,আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত পার্টি অফিসটি রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই অফিসটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে বলে তিনি জানান। নাচোল পৌর মেয়রও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ খান ঝালুর সাথে এ-বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনাটি খুব শিগগিরই অপসারণ করে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর দেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি মৌখিক ভাবে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।