যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য রইসউদ্দীন নিহত হবার ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ২ বছর বয়সী শিশু রাইশা খাতুন ও ৪ মাস বয়সী হাসান আলী কে নিয়ে লাশের অপেক্ষায় নির্বাক স্ত্রী নাসরিন খাতুন। পাশে বসে অঝোড়ে কাঁদছেন নিহত রইসউদ্দীনের মা রহিমা বেগম। ছেলের বউয়ের পাশে বসে নাতনীকে কোলে নিয়ে শাশুড়ি রহিমা বেগম তো অঝোরে কাঁদছেন। আর বলছেন, কেন তার ছোট সন্তানকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই কি অন্যায় করেছে তার সন্তান? এ সময় তিনি তার সন্তানের লাশ দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন সরকারের কাছে।
রইস উদ্দিনের মা রুমালি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেতো আর পৃথিবীতে নেই। তাই আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলেকে আমার বাড়ির পাশে দাফন করব। শুনেছি যশোরের বেনাপোলে ধান্যখোলা জেলেপাড়া সীমান্তে আমার ছেলের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। জানতে পেরেছি হেলিকপ্টারে বাড়িতে আসবে। তাই আমার ছেলের মুখটা দেখব বলে অপেক্ষায় আছি।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত রইস উদ্দিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা তারাপুর সাহাপাড়ার শ্যামপুর গ্রামে। কৃষক কামরুজ্জামানের ৫ সন্তানের মধ্যে ৩ টি ছেলে ও ২টি মেয়ে। বড় ভাই সেনাবাহিনীতে, মেজ ভাই বিজিবি তে এবং ছোট ভাই যশোর সীমান্তে বিজিবির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা যান।
রইসউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে গিয়ে দেখা যায়, রইসউদ্দীনের টিনের একচালা একটি ঘর ও রান্না ঘর তালাবদ্ধ। বাড়ির প্রধান ফটক টিতে নেয় কোন দরজা। চলমান শৈত্য প্রবাহের কারনে ২ শিশু সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী পাশেই রইসউদ্দীনের বড় ভায়ের বাড়িতে উঠেছেন। বিএসএফের গুলিতে স্বামী মারা যাবার পর এ বাড়িতেই গ্রামবাসীরা একনজর দেখতে ভীড় করছেন। রইসউদ্দীনের পিতা কামরুজ্জামান তার ২ নাতি-নাতনিকে যেন যোগ্য সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম হোসেন দাবী করেন, গতবার গ্রামে এসে ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার পর কয়েকটি জানালা বানিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। তার মত একজন সমাজ সেবককে তারা আজ হারালেন। তার দাবী সরকার এ অসহায় পরিবারটির পাশে যেন দাঁড়ায়।
স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মোসা শাহনাজ পারভিন লিলি জানান, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার এলাকার একজন শহীদ হয়েছেন। তাই সরকার যেন যথাযথ মর্যাদায় দ্রুত লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। রইস উদ্দিনের প্রতিবেশীরা বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শ্যামপুর ভবানিপুর কবরস্থানে জানাযা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে সোমবার ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরকারবারিদের ধাওয়া করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারী করার সময় চোরাকারবারীদের ধরতে সিপাহী রইস উদ্দীন দলছুট হয়ে সীমান্তে এগিয়ে গেলে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত হন। পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর ২টার দিকে মারা যান রইস উদ্দীন।