মামা তাল পাখা নিবেন। ওই মামা পাখা নেন। তাল পাখার দাম বেশি না। মাত্র ২০ টাকা। পাখা নাড়াবেন আর শান্তির বাতাস খাবেন। রমজান মাসতো বুঝতেই পারছেন। ব্যাঁচা বিক্রি নাই মামা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোর্ট চত্তরে বসে মানুষকে ধরে ধরে এসব কথা বলছিলেন আব্দুল কাদের। তার শরীর দিয়ে ঝড়ছিলো ঘাম। তালের পাখা ঘুরিয়ে বাতাস লাগাচ্ছিলেন গায়ে। হাঁসফাঁস গরমে কালো চেহরায় ক্লান্তির ছাপও ছিল স্পষ্ট। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে। পাখা বিক্রির ব্যবস্যায় পার করেছেন ২৫ বছর।
আর হাট বাজারে ঘুরে ঘুরে পাখা বিক্রি করেছেন ১০-১৫ বছর। হাট বাজারে এখন আর হাত পাখা বিক্রি হয়না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বৈদ্যুতিক পাখার দোকান থাকায় কেউ কিনতে চায়না এসব পাখা। কালের বিবর্তনে কদর কমেছে হাত পাখার। তবুও পুরানো ব্যবসায় সময় লাগিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে আব্দুল কাদেরর সংসার। অঢেল সম্পত্তি না থাকলেও, সংসারে যেন সুখের অন্ত নেই। বয়স বেশি হওয়ায় এখন আর শরীরে কুলাইনা আব্দুল কাদেরের। কিছুই তো করার নেই। এ ব্যবসাই তার কাছে মূল্যবান। ব্যবসার কাজকে আরও গতিশীল করতে কিনেছেন ভ্যান। ভ্যানে করেই এখন হাত পাখাগুলো বিক্রি করেন তিনি। তার ভ্যানে আছে তাল পাখা, বাঁশ পাখা, আর রঙ বে-রঙের কাপড়ের পাখা। সব মিলিয়ে তার ভ্যানে ৩ রকমের হাত পাখা আছে। আব্দুল কাদেরের সাথে কথা বলে জানা গেলো, ছোট কাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে বেশি সময় কাটাতেন কাদের।
ওই সব এলাকার ফুটপাতের দোকান গুলোতে বিক্রি করা হতো হরেক রকমের হাত পাখা। গরমের সময় ট্রেনে করে যাত্রিরা তাদের গন্তব্যে যাওয়ার সময়, হাত পাখা কিনতেন এবং ওই দোকানির ব্যবসাও ভালো চলতো। সেই চিন্তা থেকেই, হাত পাখা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ২৫ বছর ধরে এখনও হাত পাখা বিক্রি করছেন। স্বল্প লাভে পাখা বিক্রি করে, কোন রকম করে দিন পার করছেন। আব্দুল কাদের জানান, অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে এখন পর্যন্ত এ ব্যবসায় ভর করে বেঁচে আছি। ব্যবসার শুরুর দিকে এক-দুই হাজার টাকার মাল কিনলেই হতো। সে সময় বেঁচা বিক্রি ভালও হতো। আর তখনকার সময়ে হাত পাখারও একটা চাহিদা ছিল। আগে পাটির (মাদুর) ব্যবসা করতাম। সভ্যতার যুগে চেয়ার আর সোফার কদর বাড়ায় পাটি আর কেউ কিনতে চায়না। তাই এখন আর পাটি (মাদুর) বিক্রি করিনা। এখন গরমের সময় হাতপাখা আর তেমন বিক্রি হয়না। তিনি আরও বলেন, তাল পাখা ২০ টাকা, বাঁশ পাখা ৩০ টাকা, কাপড়ের পাখা ৪০ টাকায় বিক্রি করি। দিনে যা বিক্রি হয়, সেখান থেকে ২০০-২৫০ টাকা লাভ হয়। তা দিয়েই দিব্যি সংসার চলছে। ঘরে সেরকম আসবাবপত্র না থাকলেও, কিন্তু সুখের অভাব নাই। জীবনের শেষ কালে কারো কাছে যেন হাত পেতে না চাইতে হয়, এমনটায় বিধাতার কাছে প্রার্থনা পাখা ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের।