চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় টি.আই.এন রয়েছে ৩৯ হাজার ৮২২ জনের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই হতে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে ১১ হাজার ৫৪২ জন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় আয়কর রিটার্ন আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। কিন্তু বুধবার (৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত আয়কর জমা পড়েছে মাত্র ১৮ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৪০ টাকা। যা লক্ষমাত্রার ১৫%। জেলা উপ কর কমিশনারের কার্যালয় (সার্কেল-১৫) সুত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) আয়কর রিটার্ন আদায়ের লক্ষমাত্রা ছিল ১৪০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল ৭৫ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক। জানা যায়, গত বছর জেলায় টিআইএনধারী ছিল ৩৭ হাজার ২৫৬ জন। এবার সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৮২২ জন। টিআইএনধারী সংখ্যা বাড়লেও গত অর্থবছরের লক্ষমাত্রা থেকে ২০ কোটি কমিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৮০% আদায় হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত জুলাই হতে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৫% আদায় সন্তোষজনক নয়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষমাত্রার ৮০% আদায় কতটা সম্ভব তা সময়েই বলে দেবে। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫% আদায় হবে বলা হলেও তা আদায় করা সম্ভব হয়নি। আয়কর আইন অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করাই হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। যাঁদের ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে, তাঁদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। আয়কর রিটার্নে সরকার নির্ধারিত একটি ফরমে করদাতা তাঁর আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্য লিখে কর কার্যালয়ে জমা দেন। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের করদাতাদের জন্য আলাদা রিটার্ন জমা দিতে হয়। রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে, তা নয়। কারও আয় যদি করযোগ্য না হয়, তাহলে তাঁকে কর পরিশোধ করতে হবে না, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে। যে বছর আয়কর দেবেন, তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব করে ২০২২ সালের আয়কর দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বছরে তিন লাখ টাকার বেশি আয় হলেই তাঁকে আয়কর দিতে হয়। এ ছাড়া মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই কর দিতে হবে। আয়কর দেওয়ার জন্য তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী করদাতার আয় বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হতে হবে। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় হচ্ছে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। সাধারণত প্রতি অর্থবছরের এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তি করদাতারা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। আয়কর মেলাতেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায়। রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতা বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। করদাতাদের সেবা গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় করসেবা মাস। সেদিন থেকে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এনবিআরে জরিমানা ছাড়াই আয় ও সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার কথা। তবে এ সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে কর প্রশাসন।