ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেয়ার নামে ফেনসিডিল কেনার কথা বলে ২০ হাজার টাকা দাবি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফের একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। অডিও রেকর্ডে নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে ফেনসিডিল ও মিস্টি খাওয়া বাবদ এই টাকা দাবি করেন ফিরোজ হাসান তারিফ। ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ড ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়ার কথা বলে আসিফ আলী নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। এসময় টাকা না দিলে সিফাত উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে দেয়া হবে, বলেও হুশিয়ারি দেন ফিরোজ হাসান তারিফ। এসময় জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে মিষ্টি ও ফেনসিডিল খাওয়া বাবদ টাকাগুলো দিতে হবে বলে জানান তারিফ। জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারী নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় উপজেলা ছাত্রলীগ। সেখানে টাকা চাওয়া কর্মী আসিফ আলীকে বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক করা হয় সিফাত উদ্দীনকে। এক বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে মো. শামীম সারোয়ার, সহ-সভাপতি পদে মো. নাইম ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. সিফাত উদ্দীন ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. আসিফ আলীকে। কমিটির অনুমোদন দেন, নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলসাবা ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ। কমিটি অনুমোদনের আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারী হওয়া অডিও রেকর্ডে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ আলীকে বলেন, নতুন কমিটিতে তোমাকে সাধারণ সম্পাদক করে দিব। যদিও উপর থেকে সিফাত উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করতে নানরকম চাপ আছে। তবুও আমি তোমাকেই করতে চাই। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের বড় ভাইদেরও একটা আশা থাকে, তাদেরকে মিষ্টি ও ড্যাইল (ফেনসিডিল) খাওয়া বাবদ বেশি না ২০ হাজার টাকা দিও। ভাইরাল হওয়া কথোপকথনে পদপ্রার্থী আসিফ আলী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফিরোজ হাসান তারিফ বলেন, কমিটিতে পদে আসতে গেলে এমন খরচ লাগে। শিবগঞ্জের দিকে খোঁজ নিয়ে দেখো। একেকটা ইউনিয়ন কমিটির জন্য লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ওদের ওখানে ইনকাম আছে, তাই লেনদেনও বেশি। আমাদের এখানেও ইনকাম শুরু হয়ে যাবে। এতোদিন দলীয় এমপি ছিল না, তাও এখন হয়ে গেছে। আগামী ৬ বছরের জন্য দলীয় এমপি থাকবে ধরে নাও। অডিও রেকর্ডে পদপ্রার্থী আসিফ আলী বলেন, আমি দলকে ভালোবাসি, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে পদ দেন। কিন্তু আমি এতো টাকা ম্যানেজ করতে পারব না। এসময় ফিরোজ হাসান তারিফ বলেন, ভেবে দেখে সিদ্ধান্তÍ নাও। অনেকেই এই পদ নেয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছে। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ও নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ আলী বলেন, কমিটি প্রদানের দুই দিন আগে আমাকে ঢেকে ২০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের নামে মিষ্টি ও ফেনসিডিল খাওয়ার টাকা দাবি করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ। পরে আমি টাকা দিতে না পারায় আরেকজনকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে এবং সেই কমিটিতে আমাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে। এবিষয়ে নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য এডিটিং করে এসব অডিও রেকর্ড ফাঁস করা হয়েছে। যেই ছাত্রলীগ কর্মী এই কাজটি করেছে, তাকেও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে। কিš‘ প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে আবেগে এসব অডিও রেকর্ড ছড়িয়েছে। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে এবিষয়ে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিফাত উদ্দীন বলেন, আমিও অডিও রেকর্ডটি শুনেছি। আমার ধারনা, কমিটিতে পদ না পেয়ে এসব করা হয়েছে। আমিও তো ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছি। আমাকে এমন টাকা-পয়সার দাবিতে কোন প্রস্তাব দেয়নি কেউ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুজ্জামান আশিক জানান, বিষয়টি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. সাইফ জামান আনন্দ বলেন, আমাদের কাছে একটি অডিও রেকর্ড এসেছে, সেখানে নেজামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান তারিফ। এসময় সে বিভিন্ন অনৈতিক ও দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী নানরকম কথা বলেছে। তাই তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং তিন দিনের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।