1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
রাতের অন্ধকারে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ॥ নিরব প্রশাসন-জনমনে প্রশ্ন - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

রাতের অন্ধকারে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ॥ নিরব প্রশাসন-জনমনে প্রশ্ন

মোঃ নাদিম হোসেন-নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩
  • ১৩৭ বার পঠিত

খুটির জোর কোথায় বালু-মাটি খেকোদের? যাচ্ছে ইটভাটায়-কোটি টাকার বাণিজ্য

রাতের অন্ধকারে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ॥ নিরব প্রশাসন-জনমনে প্রশ্ন

রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রতিদিনই শত শত ট্রাক্টর। দিনের বেলায় সাধারণ মানুষ বা প্রশাসনের চোখে পড়ার ভয়ে রাতের বেলায় বালু বহন করাটা নিরাপদ মনে করেই বালুগুলো উত্তোলন এবং বহন করা হচ্ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এভাবেই চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধের ৬ নম্বর ও ৭ নম্বর বাঁধ সংলগ্ন পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলনের মহোৎসব। ফলে বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। শত শত বিঘা ফসলি জমিও পড়েছে হুমকির মুখে।

সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে চলে সারারাত বালু উত্তোলন ও বহনের কাজ। এভাবেই ভোররাত পর্যন্ত চলে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। সারারাতে পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয় শত শত ট্রাক্টর বালু-মাটি। এতে একদিকে যেমন জমির মালিক ও সরকার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে রাতে সাধারন মানুষের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হলেও কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় জমির মালিক ও সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ট্রাক্টর ও স্ক্যাপাটার জব্দ করছেন, জরিমানাও করছেন।

কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে, আবারও একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বালু-মাটিখেকোরা বালু ও মাটি অবৈধভাবে উত্তোলনের কাজ। কেন এদের দৌরাত্ম বন্ধ হচ্ছে না সেটা নিয়েও প্রশ্ন। শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর ৫ নম্বর, ৪ নম্বর ও ৩ নম্বর বাঁধে একইভাবে বালু-মাটি উত্তোলন হলে সাম্প্রতিক সময়ে গভীর রাতে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সদর উপজেলার সীমানায় এখন পর্যন্ত কোন অভিযান হয়নি। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকিতে পড়েছে নদী রক্ষা বাঁধ। এসব বালু-মাটি ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তা।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের অনুমোদন না থাকলেও উপরের মহলকে ম্যানেজ করে এই অবৈধ কর্মকান্ড চলছে। অত্যন্ত প্রভাশালী হওয়ায় নদীপাড়ারের বাসিন্দা ও কৃষকরা ভয়ে মুখ খুলছেন না। দিনের বেলায় সেখানে কেউ থাকেন না, সন্ধ্যার পরপরই ০৬ নম্বর ও ০৭ নম্বর বাঁধের বাজারে চলে প্রস্তুতি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট-বড় ৩০-৪০টি ট্রাক্টর এনে সারিবদ্ধ করে রাখা হয় আশপাশে। মাগরিব নামাজের পরপরই শুরু হয় বালু উত্তোলন। আশপাশের কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে এই ট্রাকগুলো নির্ধারিত স্থানে বালু পৌছে দেয়। ক্ষমতাসীন দলের এবং প্রভাবশালী হওয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, দিনের বেলায় বোঝার উপায় নেই, এখানে বালু উত্তোলন হয়। কিন্ত রাতে তারা এই কাজ করে। আমরা কিছু বলতে পারি না। অথচ যেখানে থেকে বালু-মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে, পাশেই আমাদের কৃষি জমি-জমা।

সেখানে আমরা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু-মাটি কাটার ফলে আগামী বন্যায় এখানে নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। তরিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, দিনের বেলা নদী থেকে বালু-মাটি কাটলে পুলিশ চলে আসে। তাই হয়তো তারা রাতকে বালু-মাটি কাটার জন্য নিরাপদ মনে করেছে। পদ্মা নদীতে আমার চার বিঘা ফসলী জমি রয়েছে। পাশের জমিগুলো এমনভাবে কাটা হচ্ছে, যাতে আমার ওখানে পরের বছর আর ফসল হবে না। বাধ্য হয়েই আমার জমিও বিনামূল্যে তাদেরকে কাটতে দিতে হবে। আর এসব মাটি তারা আশেপাশের ইটভাটায় বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে পদ্মা নদী। আর এই নদী থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে বিনা বাধায় উত্তোলন করছে বালু-মাটি। সরকার এখানে নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। অথচ অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু-মাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাক্টরের কারনে এসব বাঁধও রয়েছে ব্যাপক হুমকিতে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিম বলেন, সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলন। সারারাত বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রাক্টর চলে। গাড়ির শব্দে ঘুম হয়না।

প্রচুর পরিমানে ধুলায় ঘরবাড়ি আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। কারন প্রশাসনও ম্যানেজ হয়ে গেছে। তা না হলে কয়েক’শ মিটার দূরে পাশেই কয়েকদিন আগে একাধিকবার রাত ৩টা বা ৪টার দিকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। তার ফলে সেখানে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পাশেই সদর উপজেলায় এখন পর্যন্ত কেন অভিযান হয়নি। ৬ নম্বর বাঁধ বালু-মাটি কাটছেন শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন। তিনি জানান, অনুমোদন নিয়েই মাটি কাটছি। গত ১০ বছর থেকে এভাবেই কাটছি। তবে পদ্মা থেকে বালু বা মাটি কাটা নয়, আমরা জমি চাষাবাদের সুবিধার জন্য সমান করছি।

পাশের ৭ নম্বর বাঁধ মাটি কাটা চক্রের মূলহোতা জাফরুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় অনেক ধূলা উড়ে। তাই রাতে কাটা হয়। প্রতিবছর এসব বালু-মাটি কাটার সাথে এই এলাকার অনেক মানুষ সম্পৃক্ত। এই সবের পেছনে আমরা জড়িত নয়, ওরা নিজেরা নিজেরাই কাটে। এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী জানান, আমাদেরকে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি, তবে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!