1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
নিত্যপণ্যের অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাম বৃদ্ধি ॥ সংসার চালানোই দায় স্বল্প আয়ের মানুষদের - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২দিনে ডুবে এক যুবক ও ৩ শিশুর মৃত্যু এবছর মদিনায় প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু সরকারের ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্বের কারণে বাংলাদেশে এত উন্নয়ন-ওবাইদুল কাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এসএসসি’তে প্রথম শিবগঞ্জের নাঈম চাঁপাইনবাবগঞ্জ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এর কমিটি অনুমোদন রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন আরএমপি ডিবি’র অভিযানে ৭৪০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার-৬ গোমস্তাপুরে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত ভিসা অনিশ্চয়তায় ৪ হাজারের বেশি হজযাত্রী রংপুরে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালিত

নিত্যপণ্যের অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাম বৃদ্ধি ॥ সংসার চালানোই দায় স্বল্প আয়ের মানুষদের

নিরেন দাস-জয়পুুরহাট
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩
  • ১২৬ বার পঠিত

নিত্যপণ্যের অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাম বৃদ্ধি ॥ সংসার চালানোই দায় স্বল্প আয়ের মানুষদের

নিত্যপণ্যের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালানোই চরম দায় হয়ে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষদের। যারা মাসিক ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন, বাজার গেলেই তারাই চোখে অন্ধকার দেখছেন। এ টাকায় মাসের অর্ধেকও চলছে না। বাসা ভাড়া দিতেই চলে যায় আয়ের একটি বড় অংশ পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তো রয়েছেই। গত বছরও মাছ-মাংস, ডিম-দুধ ও ফলসহ সুষম পুষ্টিকর খাবার বাজারের মেন্যু থেকে কাটছাট করে ঋণের ওপর দিয়ে কোনমতে সংসার চললেও এখন আর সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে গুমরে কাঁদছে মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার গুলো। এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর।

বিশেষ করে কঠিন চাপের মধ্যে আছেন মধ্য আয়ের মানুষ। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন যাপন। জয়পুুরহাট সদর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন সাইফুল আহমেদ। ছোট একটি ভাইসহ তিনজনের সংসার তার। তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এতে তিনি বেতন পান প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া যেন কম লাগে সেজন্য থাকেন ভেতরের দিকে শহরের বাহিরে এক প্রান্তে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৫-২৬ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে গেছে। বাসাভাড়া দিয়ে আর বাজার সদাই করে হাতে কিছুই থাকে না। বেতন পাওয়ার ৮-১০ দিনে মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। বাকি দিনগুলো অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। গ্রামে বাবা-মা আছেন। বাড়িতে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা উল্টা আরও নিয়ে আসা লাগে। হঠাৎ করে কোনো অতিথি এলে টেনশনে পড়ে যেতে হয়। এমন একই আয়ের বিভিন্ন বাসিন্দাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, খুবই কাটছাঁট করে হিসাব নিকাশ করে চলতে হচ্ছে।

প্রতি মাসেই ধার করতে হয়। জিনিসপত্রের যে দাম, বাজারে গেলে চোখে অন্ধকার দেখতে হয় ১ হাজার টাকার বাজার কিনলে পলি ব্যাগের নিচেই পরে থাকে। তাদের দুই-তিন কে নিয়েই পরিবার তবুও তাদের চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে। একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জয়পুুরহাট শহর এলাকার বাসিন্দা মুমিনুর বলেন, ৩০ হাজার টাকার মতো ইনকাম করি। এই টাকা দিয়ে চার সদস্যের সংসার চালানো যায় না। তাই পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন এখানে মেসে থাকি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ যদি মাসিক ২৫-৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেন, তবে তার বাসা ভাড়ার পেছনেই চলে যায় কম করে হলেও ৮-১০ হাজার টাকা। তাও জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বাদ দিয়ে ভেতরের এলাকার দিকে বাসা নিতে হয়। পাশাপাশি গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলের জন্য আরও গুনতে হয় ২৫০০-৩০০০ টাকা। যদি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হয় তবে এখানে আরও এক হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র বাসা ভাড়ার পেছনেই ব্যয় হচ্ছে ১২-১৪ হাজার টাকা। এরপর তিনজনের সংসারে প্রতিমাসে বাজারের সর্বনিম্ন দামের ২৫ কেজির এক বস্তা চাল কিনতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৪০০ শত টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের মধ্যে এক মাসে মাছ-মাংস ৩০০০-৪০০০ টাকা, এক মাসে ডিম ৪০০-৫০০ টাকা, সয়াবিন তেল ৫ কেজি বোতল ৮০০ টাকা, প্রতিদিন হাফ কেজি করে দুধ কিনতে হলে মাসে ৫০ টাকা হিসেবে মাসে ১৫০০ টাকা, রসুন পেঁয়াজ মরিচ মশলা, চিনি সাবান ইত্যাদি পণ্য কম করে কিনতে গেলেও ১৫০০-২০০০ টাকা, আলু প্রতিদিন হাফ কেজি হিসেবে এক মাসে ৭০০ টাকা, সপ্তাহে ১ হাজার টাকার শাক-সবজির বাজার হিসেবে ৪০০০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিবারের একজন সদস্যের প্রতিদিন যাতায়াত করতে ৫০ টাকা ব্যয় হলে প্রতি মাসে খরচ হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসেবে খুব কাটছাঁট করে তিনজনের একটি পরিবারের মাসিক ব্যয় হয় ২৬,০০০-৩০,০০০ হাজার টাকার বেশি। যারা মাসিক এই টাকা রোজগার করেন সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না তাদের। তার ওপর যদি বাসায় কোনো মেহমান আসে কিংবা কোনো কারণে ওষুধপত্র কিনতে হয় তবে হাত পাতিয়ে ধার করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। বর্তমানে দেশের সবথেকে বড় মূল্যমানের নোট হচ্ছে এক হাজার টাকা। যা ইনকাম করতে কোনো কোনো শ্রমজীবী মানুষকে ২-৩ দিন কঠোর ঘাম ঝরাতে হয়। সেই এক হাজার টাকা নিয়ে বাজার করতে গেলে সেটা দিয়ে বাজারের যদি ছোট ব্রয়লার মুরগিও কেনা হয় তবে সেটার দাম পড়বে ২৫০ টাকার ওপরে, তিন কেজি চাল ৬০ টাকা হিসেবে ১৮০ টাকা, এক কেজি ডাল ১১০ টাকা, এক কেজি সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম রসুন ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম আদা ৬০ টাকা, গরম মশলা ৫০ টাকা, হাফ কেজি চিনি ৭০ টাকা। কোনো ধরনের সবজি না কিনেও ২০ টাকা ঘাটতি থেকে যায়। অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ মূল্যমানের নোটটি নিয়েও বাজারে গেলে তা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু কেনা যায় না। চাল-ডাল-তেল আর কিছু মশলা কিনতেই তা শেষ হয় যায়। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। আর এক কেজি গরুর মাংস কিনলে তো হাজার টাকার নোট একবারেই শেষ হয়ে যায়। বাজারে গরিবের মাছ খ্যাত পাঙাশ, সিলভার কাপ (বাংলা ইলিশ) ছাড়া বাজারে ৩-৪ শ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট বাজার ঘুরে দেখা যায় পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২৩০-২৫০ টাকা, রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০-২৫ টাকা মৃগেল মাছের কেজি ৩০০ টাকা। বাতাসি মাছের কেজি ৩৫০ টাকা। এছাড়া বাজারে পোয়া মাছের কেজি ৪০০-৫০০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা কেজি, সুরমা মাছের কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা কেজি। এক মাস আগেও যা ৫০-১০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও মাংসের বাজারে ব্রয়লার ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে যখন তখন হুটহাট করে বাড়ে নিত্যপণ্যের বাজার। ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ কখনো ৫০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। ৩৫-৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ টাকার ওপরে। দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় সম্প্রতি ১০০০ টাকা অতিক্রম করে কাঁচা মরিচের বাজার। পরবর্তীতে আমদানির পরে তা ২০০ টাকা কেজিতে নেমে আসে। বর্তমানে ২০০-২২০ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ। আবার ১০০-১১০ টাকা বিক্রি হওয়া ডিমের ডজন দেড়শ টাকা ছাড়িয়েছে। কয়েক মাস আগেই এক ডজন ডিম ১১০-১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে তা ১৫৫-১৬০ টাকা। এক বছর আগে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হওয়া চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। শুধু মরিচ, পেঁয়াজ, ডিম কিংবা চিনি নয়, হুহু করে বাড়ছে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম। অন্যদিকে, স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে টিসিবির লাইনে দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের লাইন। আগে যেখানে এই ধরনের লাইনে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষেরাই দাঁড়াত, মধ্যবিত্ত মানুষদেরকেও দেখা যায় এই লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রতিবেদক সরেজমিন ঘুরে দেখতে পায়,জেলা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির গাড়ি আসার অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করতে দেখা যায় অসংখ্য মানুষকে। টিসিবির গাড়ি এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন ট্রাকের ওপর। পণ্য নিতে যেন ট্রাক থামানোর তর সইছে না কারও। ট্রাক সাইড করতে করতে লাইনে দাঁড়িয়ে যান সবাই। এটা বর্তমানে স্বল্প আয়ের মানুষদের নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন, শিগগিরই সমাধানের লক্ষণ নেই। পাশাপাশি অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন মুখরুচক খাবার। সংস্থাটি বলছে, আমাদের গবেষণায় পাওয়া গেছে বর্তমানে সারাদেশেই বসবাসরত ৪-৫ সদস্যের একটি পরিবারের মাসে শুধু মাত্র খাদ্যব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা। সংস্থাটি আরও বলছে, বিশ্ব মহামন্দায় বাংলাদেশকে ৭টি সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেগুলো হলো,ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি সংকট, খাদ্য সংকট, ইউক্রেন সংকট, কোভিড এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট। এ সংস্থার বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন যাপন। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আলী মুঠোফোনে বলেন, যে হিসেবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সে হিসেবে মানুষের আয় বাড়েনি। এর জন্য মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের পক্ষথেকে প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের জেল জরিমানাও করা হয়েছে বলেও এ কর্মকতা বলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!