জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও জান্নাত আরা তিথি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে বদলেছে অনেক কিছুই। ফলে সেবা গ্রহনে ইচ্ছুক যে কোন শ্রেনি-পেশা ও ধর্ম-বর্নের মানুষ সরাসরি প্রশাসনের সেবা গ্রহন করছেন একেবারে নির্ভয়ে। তার আচার-আচরণ, ব্যবহার, কর্মদক্ষতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতায় মুগ্ধ কালাই উপজেলা এলাকাবাসী। এমন প্রচণ্ড গরমেও তার চেম্বারে এসি বন্ধ রেখে শুধু মাত্র জনগণের সেবায় দিচ্ছেন তিনি।
জান্নাত আরা তিথি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসাবে গত বছর ১৩ অক্টোবর এ উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই দালালমুক্ত প্রশাসন চালু করার পাশাপাশি বন্ধ করেছেন সেবা গ্রহনকারীদের হয়রানী। নিয়মিত গনশুনানীতে নিজে উপস্থিত থেকে বুদ্ধিদীপ্ত যে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, তা অব্যাহত থাকলে উপকৃত হবেন এ উপজেলার বাসিন্দারা।
সেবা নিতে আসা নারী-পুরুষরা জানান, বিগত সময়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার (ইউএনওর) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসের দরজা সব সময় বন্ধ থাকত। ইএনও’র কক্ষে প্রবেশের আগে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ও অফিস সহকারীর মাধ্যমে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের অনুমতি’র বাধ্যবাধকতা ছিল বেশ কঠিন। তবে জান্নাত আরা তিথি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন। এখন ইউএনও’র অফিস কক্ষে শুধু মাত্র বৈদ্যুতিক পাখা চললেও এসি বন্ধ থাকে। অফিস কক্ষের দরজা উন্মুক্ত রাখেন বলে নিরপাত্তা কর্মীদের নিয়ম মাফিক চেকিং করার পর অনুমতি ছাড়াই যে কেউ সাক্ষাৎ ও পরামর্শ পাচ্ছেন বর্তমান ইউএনও’র।
কালাই পৌরসভার আকন্দপাড়ার মহল্ল্যার অসহায় নিপা আক্তার জানান, তার দুই কন্যা রেখে হঠাৎ স্বামী স্ট্রোক করে মারা যায়। সে দিশেহারা হয়ে পরে। ইউএনও স্যার পরে তার বিষয় জানতে পারেন। তাকে ডেকে সান্তনা দেন, সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা দেন।
করিমপুর আদর্শগ্রামের বাসিন্দা মো. সরাফত, রফিকুল, আজিজার, আবুল হোসেনসহ অনেকে জানান, বর্তমান ইউএনও স্যার এত ভালো এবং এরকম ভালো ব্যবহার করবেন স্বপ্নেও ভাবিনি। তাদের সমস্যা নিয়ে কয়েক জন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে গিয়েছিলেন তাদের সমস্যার কথা অত্যান্ত ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধান দেন। তারা আরও জানান আদর্শগ্রাম পরিচালনার জন্য একটি অফিস ঘর ছিল। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হয়েছিল। সেটা নতুন করে মেরামতের ব্যবস্থার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মেরামত করার জন্য দায়িত্ব দেন এবং আর্থিক সংস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা করেন। তারা কখনই এতটা আশা করেনিই।
জিন্দারপুর গ্রামের ভ্যান চালক সাইফুল জানান, আগে ইউএনও’র অফিসে আসতে অনুমতির জন্য বসে থাকতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু এই স্যার আসার পর আর অনুমতি লাগে না। সরাসরি তার কাছে গেলে উপকার পাওয়া যায়। কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, তিনি একজন বিনয়ী মানুষ। তার আচার ব্যবহারের কোন প্রকার দাম্ভিকতা নেই। তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন। উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি যোগদানের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী প্রতি তার সদচারণে ভক্ত। তিনি একজন ভদ্র, সৎ, সেইসাথে একজন মেধাবী কর্মকর্তা।
ব্যাপক প্রশংসিত কালাই উপজেলার নির্বার্হী অফিসার জান্নাত আরা তিথি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তার জন্মস্থান ঝিনাইদহ সদর উপজেলায়। ঝিনাইদহ সরকরি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাধমিক, ঝিনাইদহ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ মার্ষ্টাস ডিগ্রী অর্জন করেন ইংরেজি শাস্ত্রে। তিনি ৩৪ তম বিসিএস পরিক্ষায় প্রশাসশন ক্যাডারে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীর্ন হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকুরির পর কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে কালাইয়ে যোগদান করেন। তাঁর স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বর্তমানে তার একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে রয়েছে।
ইউএনও জান্নাত আরা তিথি সহজ সরল ভাষায় বলেন, সাধারন মানুষের সেবা নিশ্চিত করাই আমার চাকুরী। তবে সেবা গ্রহনকারীদের মধ্যে অধিকাংশই গ্রামের সরল প্রাণ মানুষ। এসি চালাতে গেলে দরজা বন্ধ রাখতে হয়, আর সেবা গ্রহনকারীদের মধ্যে প্রায় সবাই দরিদ্র ও অসহায় প্রকৃতির মানুষ, দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে তারা ভয় পান। অনুমতিরও ঝামেলা পোহাতে হয়, তাই অফিসের দরজা সব সময় উন্মুক্ত থাকে। যেন সেবা গ্রহীতাদের কোন ভয়-ভীতি না থাকে। সাধারণ মানুষ আমার কাছে সহজেই আসে এবং তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলে। আমির যথাসাধ্য চেষ্টা করি সেবা দেয়ার।