চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুরে ধারের টাকা চাইতে গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন এক মাদরাসা শিক্ষক। গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে ওই শিক্ষক বাসায় শয্যাশায়ী রয়েছেন ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত শিক্ষক গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও কাশিয়াবাড়ি আলিম মাদরাসার শিক্ষক মো. অহিদুজ্জামান নিপু (৩৮)।
গত ১লা সেপ্টেম্বর সকালে কাশিয়াবাড়ি গ্রামের উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটুর বাড়ির সামনে তাকে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে এনিয়ে গোমস্তাপুর থানায় আহত মাদরাসা শিক্ষক অহিদুজ্জামান নিপুর স্ত্রী ও একই মাদরাসার শিক্ষক মোসা. সাবিহা খাতুন বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে এ ঘটনায় মারধরের ১০দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকেই আটক করতে পারেনি।
আহত শিক্ষক অহিদুজ্জামান নিপুর স্ত্রী, তার পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটুর কাছে ধারের পাওনা টাকা চাইতে গেলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে লোকজন নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তাকে স্থানীয়রা উদ্বার করে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা।
আহত মাদরাসা শিক্ষকের স্ত্রী সাবিহা খাতুন বলেন, আমার স্বামীকে পশুর মতো বেধড়ক মারধর করেছে সন্ত্রাসীরা। এমনকি মারধরের পরে এখনও নানারকম হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এই মুহুর্তে আমাদের পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবি জানায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। আহত শিক্ষক অহিদুজ্জামান নিপুর ভাই আওরঙ্গজেব (৪৫) জানায়, নিপুকে মারার সময়ে ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। এক মেয়ে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করে সন্ত্রাসীরা। মারধর করে তারাই ভ্যানে করে বাড়ির সামনে তাকে ফেলে যায়। কতোটা নির্মম হলে মানুষ এমন অমানুষিক নির্যাতন করতে পারে? নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দিনদুপুরে সকলের চোখের সামনে মাদরাসা শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। অনেকেই বিষয়টি দেখেছে। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাই না। কারন গোলাম মোহাম্মদ ফিটু একজন অনেক বড় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে হামলা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।
এবিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটু বলেন, আমার পরিবার ও স্বজনদেরকে নিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ ও খারাপ ভাষা প্রয়োগ করায় স্থানীয়রা তাকে মারধর করেছে। এছাড়া অহিদুজ্জামান নিপু আমার কাছে কোন টাকা-পয়সা পাবে না। গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী একই শিক্ষককে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামিউল আলম শ্যামল ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।