নগদ অর্থ বা গয়না নয়, বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে বর নাবিন আদনানের কাছ থেকে পাঁচটি ফলজ ও বনজ গাছ নিয়েছেন নাটোরের মেয়ে সুকৃতি আদিত্য। বিয়ের আসরেই বরপক্ষ কনে পক্ষকে মোহরাণা গাছ বুঝিয়ে দেন। সেদিনই তা রোপন করেন বর-কনে। নাটোর শহরের সদরের দিঘাপতিয়ায় উত্তরা গণভবনের পাশে সুকৃতিদের বাড়ি। দেনমোহর নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করে ভালবাসা ও বন্ধনকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যতিক্রমী ও পরিবেশবান্ধব দৃষ্টান্ত তৈরি করতেই এমন উদ্যোগ সুকৃতি-নাবিন দম্পতির। শুক্রবার দুপুরে দুই পরিবারের সম্মতিতে ঘরোয়া পরিবেশে এ বিয়ে হলেও দেনমোহর হিসেবে পরিবেশের বন্ধু গাছ নেয়ার খবর ফেসবুকে জানাজানি হওয়ার পর সবার প্রশংসায় ভাসছেন এ নবদম্পতি। বিয়ের দিন নাটোর শহরের সদরের দিঘাপতিয়ায় উত্তরা গণভবনের পাশে সুকৃতিদের বাড়িতে একদিকে যেমন সবাই ব্যস্ত ছিল হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ, উচ্ছ্বাসে- ঠিক তেমনি অন্যদিকে গাছ লাগাতে ব্যস্ত ছিলেন বর-কনে। কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাটা চলছে- আমার মনে হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়েতে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য না। দুটি মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। সেখান থেকে মনে হলো যে যদি এমন কিছু করা যায়, যা আমাদের প্রকৃতিকেও সুস্থ রাখবে। সেই সাথে আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ রাখবে। তাই নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে আমার মনে হয়েছে, গাছ একটা দারুণ উপকরণ হতে পারে, যেটার মাধ্যমে পরিবেশটাও সুস্থ থাকলো, আমরাও খুশি থাকলাম পরিবেশের সুস্থতা দেখে। নাবিন আদনান বলেন, দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। এক ধরণের দৃষ্টান্ত হিসাবেই আমরা চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।
নাটোরের বাসিন্দা এম. আসলাম লিটন-সুস্মিতা দম্পতির একমাত্র কন্যা সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর এবং কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে পড়ালেখা সম্পন্ন করেছেন। বছর ছয়েক আগে তারা পূর্ব পরিচয় থেকে ভালবাসার বন্ধনে জড়ান তারা। পরে শুক্রবার সুকৃতি-নাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিয়ের আসরেই বরপক্ষ কনে পক্ষকে মোহরণা গাছ বুঝিয়ে দেন।
কনের বাবা এম. আসলাম লিটন জানান, মেয়ে সুকৃতি আদিত্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, বিয়েতে সে মোহরানা নেবে না। নিলেও সে একটা টোকেন নিতে চায়। অভিভাবক হিসাবে তারা সুকৃতির সেই সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তার মেয়ে মনে করে মোহরানা নিয়ে টাকার অংক বাড়িয়ে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় সে থাকবে না।
সমাজকে সুকুতি একটা বার্তা দিতে চায়, মোহরানাটা মূল নয়। মুলটা হচ্ছে দুটি মানুষের বন্ধন। দুটি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এই বন্ধনটাই আসল। কোনো অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবদ্ধ হওয়া বেশি জরুরি। সেই জায়গাটা সুকৃতি অনুভব করেছে। মেয়ে এমন ব্যতিক্রম একটা সিন্ধান্ত নিয়েছে বলে বাবা হিসাবে আমি গর্বিত।