আগামী ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। ইতোমধ্যে দলটি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছে। তবে এখনও ভেন্যুর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি পাবে কি না তা নিয়ে অশ্চিয়তা রয়েছে। তবে বিএনপি নেতৃবৃন্দ নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ হবে ধরে নিয়েই তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেকোনো মূল্যে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। প্রতিদিনই প্রস্তুতি সভা ও যৌথসভা করছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা করছেন মতবিনিময় সভা, ঘরোয়া বৈঠক। এছাড়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিএনপি’র উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এসব সভায় তৃণমূল নেতাদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পুলিশি গ্রেপ্তার এড়িয়ে কৌশলী অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাজপথে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। এদিকে, ৬৪টি জেলা থেকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তবে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকেই বেশিসংখ্যক লোক মহাসমাবেশে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন নেতারা। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে সামনে রেখে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রেপ্তার আর মামলার সংখ্যা। তবে এসব প্রতিবন্ধকতাকে এবার আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। সর্বাত্মক প্রস্তুতিতে থেমে নেই তারা। এবার ‘ভিন্ন কৌশল’ নিয়ে এগোতে চায় বিরোধী দল বিএনপি। মহাসমাবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সারাদেশে বাড়ানো হয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। নেতাকর্মীও বাধা ডিঙিয়ে ঢাকামুখী হতে শুরু করেছেন। চলছে জনতার ঢল নামানোর পরিকল্পনা। তবে পথে পথে প্রতিবন্ধকতা ও হামলা করলে সেখানেই প্রতিরোধের চিন্তা করছে দলটি। এদিকে, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবারের আন্দোলন ‘অবধারিত’ লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের ভয়ভীতি, গ্রেপ্তার, মামলা, রাতের বেলায় মামলা পরিচালনা কোনো কিছুই আর আটকে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ যদি সরকারে থাকে, প্রতিটি পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। মানুষ এখন জেগে উঠছে। তারা তাদের দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর। একটার পর একটা আন্দোলন করে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আর আওয়ামীলীগের কর্মসূচি হলো, শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করা। এ কাজটা তারা খুব সুচারুভাবে করে যাচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব বলেন, একটা কথা আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারবে না। আওয়ামীলীগের কোনো ভয়ভীতি, সভা-সমিতি, যত কিছুই করুক আমাদের, বাংলাদেশের মানুষকে তাদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আটকে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আপনি গ্রেপ্তার বলেন, মামলা বলেন, রাত্রিবেলা মামলা পরিচালনা বলেন, কোনোটাই আর আটকে রাখতে পারবে না। সুতরাং এবারকার আন্দোলন একটা অবধারিত লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে এবং সেটা জনগণের বিজয় আনার জন্য। বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের জন্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছে। তবে পুলিশ বলেছে, তারা রাস্তায় সমাবেশ করতে দেবে না। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এ রকম কোনো উত্তর পাইনি। আমরা জানিয়েছি তাদের (পুলিশ কর্তৃপক্ষ)। এখানে অনুমতি চাওয়ার কিছু নেই। এখানে পুলিশকে অবগত করতে হয়, সে অবগত আমরা করেছি। এখন তাদের দায়িত্ব, এখানে কীভাবে কী করবে না করবে, সেটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
আওয়ামীলীগ সমাবেশ ডেকেছে। জামায়াতে ইসলামীও ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা, বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অন্যান্য দলেরও অধিকার আছে, আওয়ামীলীগেরও অধিকার আছে কর্মসূচি করার। জামায়াতে ইসলামী মহাসমাবেশ ডেকেছে, তাদের সে অধিকার আছে। গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপৎ আন্দোলনে আছে, তারাও সমাবেশ ডেকেছে, প্রায় ৪০টি দল ডেকেছে। একে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আন্দোলন একটা দলের বিষয় নয়। এটা শুধু এখন বিএনপির বিষয় নয়, সারা দেশের জনগণের বিষয়। সে কারণেই আমরা বলি, এটা একটা মুক্তির যুদ্ধ। এবারকার সংগ্রাম হচ্ছে ‘আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সন্ত্রাস করেই তারা টিকে থাকতে চায় এবং টিকে আছে। সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় আসা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা এটা তাদের অভ্যাস। এখনও একই কাজ করছে তারা। সারা দেশে একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর উদ্দেশ্য যাতে নির্বাচনের আর পরিবেশ না থাকে। শুধু বিরোধী দল নয়, ভোটাররাও যাতে না যায়, তার ব্যবস্থা তারা করে ফেলেছে। ভোট বাক্স কীভাবে ভরে ফেলবে, সে ব্যবস্থাও তারা করে ফেলেছে। নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আবারও তারা কীভাবে ক্ষমতায় আসবে, সেই পরিকল্পনা তারা করেছে। সেভাবেই তারা এগোচ্ছে।
আনসার বিল ‘আতঙ্কের’ বিষয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সোমবার সংসদে একটা বিল এসেছে, এটা শুধু দুশ্চিন্তার নয়, আতঙ্কের বিষয়। গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এরা কীভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন।