চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে অবৈধ পদে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফী) মোঃ আবু তালেবের চাকুরী ও বিল বেতনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহোযোগিতায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টির জন্য জেলা হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বিভাগকেই দায়ী করছেন জেলা এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসের কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে ভুল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফী) পদে কোন অতিরিক্ত পদ-পদবী না থাকলেও মোহাঃ আবু তালেব অবৈধভাবে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চাকুরী করছেন। এই দীর্ঘদিনে আবু তালেব কে চাকুরী করতে এবং অবৈধভাবে বেতন উত্তোলন করতে অজ্ঞাত কারনে সহযোগিতা করেছেন তৎকালিন সিভিল সার্জনগণ এবং বর্তমানেও সহযোগিতা করে চলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মাসুদ পারভেজ বিষয়টি জানলেও কোন ব্যবস্থা নেন নি অদ্যবধি। আর জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মাসুদ পারভেজ এর নির্দেশেই বর্তমানেও জেলা এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসে প্রতি মাসে আবু তালেবের বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদীর বিল পাঠাচ্ছেন জেলা হাসপাতালের ক্যাশিয়ার মোঃ রেজাউল করিম। প্রতি মাসের বিল পাশ করার পর সেই অর্থ ছাড় করছেন জেলা এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিস। দীর্ঘসময় জেলা হাসপাতালে এমন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের অর্থ অবৈধভাবে উত্তোলন এবং পদ না থাকলেও আবু তালেব চাকুরী করলেও কোন মাথাব্যাথা নেই জেলা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মাসুদ পারভেজ কে জানাতে এবং এমন অনিয়মের প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রতিবেদক জানতে চাইলে, জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক উল্টো আবু তালেবের পক্ষে কথা বলেন। এছাড়াও অবৈধভাবে চাকুরী এবং বেতন-ভাতাদী উত্তোলন করলেও আবু তালেব দীরদর্পে কথা বলেছেন এবং বিষয়টিকে তোয়াক্কাও করছেন না। চাকুরীতে অনিয়ম এবং অবৈধ অর্থ উত্তোলন করে জেলা হাসপাতালে দাপটের সাথেই চাকুরী করছেন আবু তালেব বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর এমন দাম্ভিকতার জোর কোথায়, আর এতদিন কিভাবে অবৈধভাবে চাকুরী করে বেতন উত্তোলন করে যাচ্ছেন, অনিয়মের বিষয়টি জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনেও না জানার ভান করে দিনে পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আবু তালেবকে চাকুরী করতে এবং বেতন উত্তোলনে সহযোগিতা করছেন, কোন অজ্ঞান কারনে জেলা হাসপাতালে এমন অনিয়ম চলছে এতদিন, বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এভাবেই ১১ বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন আবু তালেব।
এব্যাপারে জেলা হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আবু তালেব এর যোগদান এখানে আমার যোগদানের আগে। পূর্বের বিষয়টি আমার জানা নেই। বর্তমানে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বরাবরের মতো প্রতি মাসেই আবু তালেবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বিলের তালিকা জমা দিয়ে আসছি জেলা এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসে। সেই মোতাবেক জেলা এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিস বিলের অর্থ ছাড় করে দেন। সকলের মতোই আবু তালেব বেতন-ভাতাদী উত্তোলন করে আসছেন। বৈধ-অবৈধের বিষয়টি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আবু তালেবই ভালো বলতে পারবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে অবৈধ পদে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফী) মোঃ আবু তালেবের চাকুরী ও বিল বেতনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি অবৈধভাবে বেতন উত্তোলন বিষয়ে জেলা এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসের জেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা হাসপাতালের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিমাসে বেতন বিল পাঠানো হয়, আমরা সেই বিল মোতাবেক অর্থ ছাড় দিয়ে থাকি। আমরা এব্যাপারে কোন কিছু অবগত নই। বৈধ অবৈধ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জেলা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের। রাষ্ট্রের অর্থ নিরাপত্ত্বার দায়িত্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের অর্থ নিরাপত্ত্বার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। এতদিন আমরা বিষয়টি জানতাম না। এখন জানলাম, কোন অবৈধ অর্থ উত্তোলন হয়ে থাকলে, বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আবু তালেব এর অবৈধভাবে চাকুরী করা এবং বেতন উত্তোলন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ আনোয়ারুল কবির এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জেলা হাসপাতালে কোন অনিয়ম হলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। তবে এমন অনিয়ম হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
উল্লেখ্য, তথ্য গোপন করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফী) পদে একজনের বেশী কোন অতিরিক্ত পদ-পদবী না থাকলেও মোহাঃ আবু তালেব অবৈধভাবে রাজস্ব কোষাগার থেকে (সরকারী অর্থ) বেতন উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ‘পদ শূন্য আছে’ এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেলা হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী) পদে চাকুরী করে আসছেন আবু তালেব বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে অবৈধভাবে চাকুরী করে সরকারী কোষাগারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা তসরুফ (অবৈধ ভোগ) করেছেন আবু তালেব। প্রায় ১১ বছর ধরেই এই অনিয়ম চললেও কোন প্রতিকার বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী) মোহঃ আবু তালেব গত ১৫ নভেম্বর/২০১২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বদলী হয়ে আশার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট ভূয়া তথ্য দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী) পদ শূন্য আছে বলে প্রতারণার মাধ্যমে গত ১৫ নভেম্বর/২০১২ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলী আদেশ হয়। স্মারক নং-স্বাঃ অধিঃ/ প্রশা-৩/মেডিঃ টেকঃ রেডিওঃ/বদলী ৩০/২০১২/৫৮২৪/১(৯) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১) ডাঃ মোহাম্মদ হেদায়েতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ঠাকুরগাঁও বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের স্মারক নং-৪৩৫/১(৯)তারিখ ২৪/১১/২০১২ ছাড়পত্র নিয়ে তৎকালীন আধুনিক সদর হাসপাতালে ২৯/১১/২০১২ ইং তারিখে যোগদান করেন মোহাঃ আবু তালেব।