৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ভরাডুবিতে অভ্যন্তরীণ আগুনে জ্বলছে জাতীয় পার্টি। দলের ভরাডুবিতে ক্ষুব্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হককে পদত্যাগ করতে সময় বেঁধে দেন ৪৮ ঘণ্টা। এতে চরম অপমানবোধ ও সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের শেষ মুর্হূতে পার্টির দুই শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার করেন জিএম কাদের। ফলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে, জ্বলছে আগুন। এ আগুন সহসাই নিভছে না বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আগুনের লেলিহান শিখা। এ আগুনের মধ্যে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ পার্টির বৃহৎ অংশের শীর্ষ নেতারা। তারা কেউ কাউকে মানছে না।
নির্বাচনে পরাজিত হয়ে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীতে দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে দলের নেতাকর্মীরা। ওই সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে পদত্যাগ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সেদিন তারা জানিয়েছেন পদত্যাগ না করলে দলের চেয়ারম্যান-মহাসচিবকে অপসারণ করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। দলের যেসব নেতা সেদিন এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা সবাই জিএম কাদেরের একান্ত অনুগত। ফলে তারাই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। এদিকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটার দেয়ার পর নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী, বর্জন ও প্রত্যাহার করা প্রার্থীদেরকে নিয়ে আগামীকাল রবিবার সকালে বৈঠক ডেকেছেন বিক্ষোভকারীরা। তার দুদিন আগেই দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে সাবেকমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। দলীয় সব পদ-পদবি থেকে তাদেরকে অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি এবার পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। দলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর বিভাগে পেয়েছে মাত্র ৩টি আসন। ঢাকায় জোটেনি একটি আসনও। দলের প্রায় আড়াইশো প্রার্থী হারিয়েছেন জামানত। নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা হলেও নতুন মন্ত্রিসভায় ঘোষিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় জায়গা হয়নি জাপার কোনো এমপির। বিভিন্ন সময়ে দেশে জাতীয় নির্বাচন এলেই নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়া জাতীয় পার্টি এবারও ব্যতিক্রম ছিল না। দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের সঙ্গে বিরোধের কারণে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ এবার ভোটে অংশ নেননি। ভোটে ভরাডুবির পর জাতীয় পার্টি সংসদে শপথ নেবে কি না, এ নিয়েও দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য নাটকীয়তার জন্ম দেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ১১ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির নব-নির্বাচিত ১১ সংসদ সদস্য দ্বাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন। শপথগ্রহণ শেষে জিএম কাদের বলেন, আমরা বিরোধীদলে ছিলাম এবং বিরোধীদলেই থাকতে চাই। জাতীয় পার্টি জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক দল, জনগণের জন্য যেটা ভালো হয়, আমরা সেটিই করতে চাই। এদিকে, নির্বাচনে জাপার ভরাডুবির জন্য দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দোষারোপ করছেন জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ। তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, ভোটের মাঠে দলের প্রার্থীদের কোনো সহযোগিতা করেননি জাপার হাইকমান্ড।
রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পার্টির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে দেননি। অথচ পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত চার বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদূরদর্র্শিতা এবং অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওইদিন দুপুরে শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সমর্থকরা দুটি বাসে করে বনানী কার্যালয়ে আসেন। এরপর আসেন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তবে দলের নেতাকর্মীদের এ বিক্ষোভ বা অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানান, যারা আমাদেরকে বিতর্কিত করার জন্য করিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।