মেয়ে নাইমা খাতুনকে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবীতে বাবা-মায়ের সংবাদ সম্মেলন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুরের কিশোরী নাইমার বাবা-মা। কিশোরী নাইমা হত্যার ২২ দিনেও কোন আসামী আটক না হওয়ায় সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবে ভূক্তভোগী নাইমার পরিবার এই সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত নাইমার বাবা মো. মাজারুল, মা রিনি বেগম, আত্মীয় আব্দুর আব্দুর রকি, চাচা আব্দুর রশিদ ও আসগর আলীসহ স্বজনরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাইমার আত্মীয় আব্দুর রকি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুরে ১২ বছরের শিশু নাইমা হত্যার ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগি পরিবার দ্রুত সময়ে আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।
লিখিত বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তুচ্ছ ঘটনার জেরে গত ২১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় তাদের বাড়ির উঠানে এসে বাবুল আলী, আবোল হোসেনসহ ৭ জন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে নাইমার মা রিনি বেগমকে মারধর করতে থাকে এবং এসময় নাইমা দেখতে পেয়ে তার মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে আসামীরা তাকেও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে এবং তার শরীরের কাপড় ছিড়ে ফেলে রক্তাক্ত ও জখম করে ফেলে। সে গুরুতর আহত হলে তাকে প্রথমে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তার অবস্থার অবনতি হলে পরবর্তীতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জানুয়ারী সে মারা যায়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোন অজ্ঞাত কারণে আসামীদের ধরছে না। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নানাভাবে হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করে নাইমার মা বলেন, প্রথমে আমাকে মারধর করে একই এলাকার মৃত রিফাত আলীর ছেলে মোঃ বাবুল আলী ও আবোল হোসেন। পরে আমার মেয়ে আমাকে বাঁচাতে গেলে মৃত রিফাত আলীর ছেলে মোঃ বাবুল আলী ও আবোল হোসেন, বাবুল এর স্ত্রী শিল্পী বেগম, মৃত রিফাত আলীর মেয়ে নাজমা খাতুন, আবোল হোসেন এর স্ত্রী ইসমোতারা বেগম, ইলিয়াশ আলীর মেয়ে খাদিজা বেগম এবং মৃত রিফাত আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম উত্তেজিত হয়ে নানাভাবে খুব খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার মেয়ে নাইমা কে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে। তাদের হামলায় গুরুত্বর আহত হয় নাইমা। তাকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহীতে চিকিৎসা দেয়া হয়। রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যায়। মামলায় নাইমার বিষ খাওয়ার কথা লেখা বিষয়ে নাইমার মা রিনি বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে মারধর করার সময় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি এবং নাইমার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার নাইমাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করি। মামলায় বিষ খাওয়ার যে বিষয়টি লেখা হয়েছে তা আমার জানা নেই। আর যদি বিষ পাওয়া যায়, সেটা নাইমাকে মারধর হওয়ার পর। তিনি বলেন, আসামীরা নাইমার অবস্থা খারাপ দেখে এর দায় এড়াতে ষড়যন্ত্র করে থাকতে পারে। এঘটনার পর এলাকায় তদন্ত করে থানার এস.আই সোহেল মামলা লিখে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বললে আমি স্বাক্ষর করি। কিন্তু মামলায় এসব লেখার বিষয়ে কোন কিছুই জানিনা আমি। আমি অশিক্ষিত মানুষ, অতসব বুঝতে পারিনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এস.আই হোসেন কোন অজ্ঞাত কারনে আসামীদের বাঁচাতে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য এসব করেছে এবং আসামীও ধরছে না। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রিনি বেগম বলেন, আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এবং তাদের ফাঁসি দাবী করছি। এছাড়াও হত্যাকারীদের যারা বাঁচাতে চাইছে, তাদের ও বিচার দাবী করছি। এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, আসামীদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নাইমা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই হোসেন এব্যাপারে বলেন, নাইমা মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলায় আসামীদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। আসামীদের ধরতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, কিশোরী নাইমাকে মারধর করা হয়েছে এটা সত্য। মারধরের পর অভিমানে নাইমা বিষ পান করে, গুরুত্বর আহত ও আশংকাজনক অবস্থায় নাইমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় নাইমা মারা যায় গত ২৭ জানুয়ারী/২৪ এ। নাইমার মা হাসপাতালে অসুস্থ থাকায় পরদিন নাইমার বাবা মাজারুল ইসলাম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মারধর করলেও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। নাইমার মায়ের করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি, আসামীদের গ্রেফতারের। খুব কম সময়ের মধ্যেই আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি মারধরের সময় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৭ জানুয়ারী মৃত্যু হয় নাইমা খাতুনের। পরদিন শিবগঞ্জ থানায় তার বাবা মোঃ মাজারুল বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। শিবগঞ্জ থানার মামলা নং-৫২, তারিখ-২৮/১/২০২৪ ইং।