1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
সময়ের কারণে দেশের ২৮ হাজার হজযাত্রীর হজ অনিশ্চিত! - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

সময়ের কারণে দেশের ২৮ হাজার হজযাত্রীর হজ অনিশ্চিত!

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৪৫ বার পঠিত

সময়ের কারণে দেশের ২৮ হাজার হজযাত্রীর হজ অনিশ্চিত!

সময় না বাড়ালে দেশের ২৮ হাজার হজযাত্রীর হজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে! আগামী ২৯ এপ্রিল শেষ হচ্ছে হজের ভিসার আবেদনের সময়। কিন্তু এখনও ৮০ শতাংশ হজযাত্রীই ভিসার জন্য আবেদন করেননি। ৩ দিনের মধ্যে বিশাল সংখ্যক এই হজযাত্রীদের ভিসার জন্য আবেদন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ফলে হজের ভিসা আবেদনের সময় আরও বাড়ানোর আবেদন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধর্মসচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দার। এছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীদের বেশিরভাগ এখনও ভিসার আবেদন করতে পারেননি। বাড়িভাড়া করতে না পারা অন্যতম কারণ। বাকি ৩ দিনে এত সংখ্যক হজযাত্রীদের ভিসার আবেদন করাও সম্ভব নয়। পুরো বিষয়ে সংকটের কথা উল্লেখ করে সৌদি সরকার ও দূতাবাসকে হজের ভিসার আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি কিছুদিন হয়ত বাড়তে পারে।
এদিকে, চলতি বছর হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি আরব পাঠানো হচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৬২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক বিশাল বহর। গত বছর এ সংখ্যা আড়াইশর কম হলেও এবার তিন শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। তাদের জন্য বিমানের টিকিট চেয়ে ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। চিকিৎসক ছাড়া বাকিদের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরও প্রতিবছরই থাকা-খাওয়াসহ সরকারি খরচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশাল বহর সৌদি পাঠানো হয়। প্রতিবছরই হাজিদের সেবা না দিয়ে অন্যত্র ঘুরে বেড়ানোসহ নানা অভিযোগ উঠে এই দলের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পিওন, মালী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এই সেবা দল গঠন করা নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। অন্যদিকে, আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো হাজিদের বাড়িভাড়াসহ অনেক আনুষ্ঠানিকতাই বাকি রয়েছে। প্রতিবছরই দেরিতে এই উদ্যোগ নেয়ায় সুবিধাজনক জায়গায় বাড়ি না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ জন্য অতিরিক্ত অর্থও গুনতে হয়। এবার এখন পর্যন্ত বাড়িভাড়া চূড়ান্ত করতে না পারায় পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ চলছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাবের মধ্যে। এ জন্য হাব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছে।
অপরদিকে, ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ অনুযায়ী-৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও কিছু এজেন্সি বাড়ি ভাড়া করার ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি, ২৮ হাজার হজযাত্রীর মুজদালিফায় যাওয়া অনিশ্চয়তা, হজযাত্রীদের বাড়িভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিসা না পাওয়া, মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়ার টাকা পাঠালেও আইবিএন অ্যাকাউন্টে না পাঠানোয় বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব চ্যালেঞ্জর মুখে চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা। এসব সংকট কাটাতে কার্যত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এজন্য হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় একে অপরকে দোষারোপ করছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন, এই বছরের ১ মার্চ থেকে পবিত্র হজ পালনের ভিসা ইস্যু শুরু হবে এবং ২৯ এপ্রিল ভিসা আবেদন করা যাবে। কিন্তু দেড় মাসে ভিসা আবেদন করেছে মাত্র ১৬ হাজারের মতো। আবার ৮০ শতাংশ হজযাত্রী এখনো ভিসার জন্য আবেদন করেননি।
ধর্মমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাচ্ছেন ৯ হাজার ৯৬৮ জন। আর বেসরকারিভাবে যাচ্ছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। সব মিলিয়ে হজে যাচ্ছেন ৮৮ হাজার ৮৬৩ জন। হজের নিবন্ধন শেষে চলতি বছর কোটা খালি রয়েছে ৩৮ হাজার ৬৩৫ জনের। বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। এর মধ্যে সরকারিভাবে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ৬৬৮ জন। বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। সব মিলিয়ে মোট নিবন্ধন করেছেন ৮৮ হাজার ৫৬৩ জন। জানা গেছে, হজের খরচ সাধারণ হাজিদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় গত দুই বছর ধরে কোটা ফেরত যাচ্ছে। ২০২৩ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা নির্ধারণ হয়। গতবারের তুলনায় এবার প্যাকেজের দাম ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কমানো হয়েছে। এবার হজের নিবন্ধন শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় চার দফা সময় বাড়িয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতেও কাংক্ষিত সাড়া মেলেনি।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, হজ টিম সদস্যদের জন্য বিমানের টিকিট বরাদ্দ করতে হবে। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা ও হজযাত্রীদের সেবার কথা উল্লেখ করে এ বছর গঠিত বিভিন্ন হজ টিমের সদস্যদের জন্য কয়েকটি তারিখে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে টিকিট ইস্যু করতে বলা হয়েছে। মোট টিকিট লাগবে ৩৬২টি। ২৮ এপ্রিল থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে জেদ্দা এবং ৫ জুন থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত জেদ্দা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বিজনেস ক্লাস ও ইকোনমি ক্লাসের টিকিট প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মুহা. আবু তাহির। তালিকার মধ্যে চিকিৎসক ৮৫, নার্স ৫৫ এবং ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ ১৭৯ জন রয়েছেন। বাকিরা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে হজযাত্রীর সংখ্যা কমলেও তদারককারীর সংখ্যা এত বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সুত্র জানায়, প্রতি বছরই হজের কাজ তদারকির নামে অনেকটা গণহারে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের সংখ্যা বেশি। সৌদি আরব যেতে কার নাম ঢোকানো যাবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা ও তদবির হয়েছে। তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেশ কয়েকবার সৌদি আরব গেছেন। হজযাত্রীদের দেখভালের জন্য এত কর্মকর্তা-কর্মচারীর যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সরকারের টাকা এভাবেই গচ্চা যাচ্ছে। একই ধরনের অভিযোগ করে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে যদি হজযাত্রীরা কষ্ট পায় তাহলে তিনি রেহাই পাবেন না, আমরাও রেহাই পাব না। হজ ব্যবস্থাপনায় অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি ছিল। আমরা অন্যায় করব না, করতে দেব না এ সেøাগানে কাজ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাব অবস্থান নেয়। হাব সভাপতি আরও বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা স্থায়ী না, তারা দুই-তিন বছর পরপর বদলি হন, হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাদের কারণে হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাই না। সরকারি কর্মকর্তারা কখনো বেসরকারি হজযাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। মিনা, মুজদালিফায় তারা কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হজযাত্রীর সেবার জন্য মাত্র ৪০ জন প্রয়োজন। কিন্তু সহায়তার নামে প্রশাসনিক টিমের বিশালসংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!