চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সর্বত্র চলছে তীব্র তাপদাহ, সাথে বিরতিহীন বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ, এ যেন ঘাঁয়ের উপরে বিষ ফোঁড়া! গত ২৪ ঘণ্টায় নাচোলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচন্ড গরমে উপজেলার সর্বত্র জনজীবন যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নারী-বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রচন্ড গরম সহ্য করতে না পেরে নানাভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রচন্ড রোদ ও গরমে রাস্তা-ঘাটে মানুষের যাতায়াত অনেকাংশে কমে গেছে। অতিরিক্ত গরমে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। পেটের প্রয়োজনে প্রচন্ড গরমে কাজে বের না হলে জুটবেনা খাবার। প্রখর রোদের দুপুরে রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা না থাকায় সিএনজি, ভ্যান, রিক্সা-অটোরিক্সা চালকদের যাত্রী ছাউনি ও গাছের ছায়ায় বসে থাকতেও দেখা গেছে। গরমে অতিষ্ঠ অনেকেই হাট-বাজারে ঠাণ্ডা শরবত ও আখের রসে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। উপায়ন্তর না পেয়ে ১০০-১৫০টাকার ডাব ৫০টাকা কেজির তরমুজ ও ৪০টাকা কেজির শসা খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। নাচোলের আম চাষীরা বলছেন, অসহনীয় গরম ও তীব্র খরায় আমের গুটিগুলো ঝরে পড়ে যাচ্ছে, মুকুলের বেশ ক্ষতি হচ্ছে। সব চাষাবাদ ভু-গর্ভস্থ পানির মাধ্যমে হচ্ছে বলেই পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। সাধারণ পাম্প দিয়ে গাছের গোড়ায় পানি দিতে পারছিনা, এ ছাড়াও বিদ্যুতের লোডশেডিং সাথে লো ভোল্টেজের ভেলকিবাজি! ধান চাষীরা বলছেন, ভরা মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় (নেস্কোর) ভোল্টেজ কম থাকায় বিপাকে পড়েছি আমরা। এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে ধানের বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করছেন চাষীরা। এদিকে, মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র তাপদাহে আম, পিয়ারা, পেঁপে, লিচু, ড্রাগন, কমলা-মাল্টা ও আঁখ ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, নেস্কো বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম থাকায় বিপাকে পড়েছে পোল্ট্রি খামারি ও ব্যবসায়ীরা, মারা যাচ্ছে অনেক মুরগি।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরজমিনে দেখা গেছে, বিক্রেতা ছাড়া ক্রেতা কম। নাচোলে বাজারের চায়ের দোকানদার মুকশেদ বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে বেচা বিক্রি একদম কমে গেছে, কিস্তির চিন্তায় ঘুম আসে না। দোকান না চললে খাব কি, কিস্তি দিবো কি! এছাড়াও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসহ স্টুডিও ফটোকপি, ছোট মিল কারখানার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভোল্টেজ না থাকাই তারা কম্পিউটার ফটোকপি মেশিন চালাতে পারছেননা। এমনিতে ব্যবসা কম তবুও দু-একটা কাস্টমার থাকলেও ভোল্টেজের কারণে পড়তে হচ্ছে মহা বিপদে।
ভ্যানচালক শাহিদ বলেন, পেটের ধান্দায় এত গরমে সকালে ভ্যান নিয়ে বের হলেও দুপুর পর্যন্ত তেমন কামাই-রোজগার করতে পারিনি। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ পরিবার নিয়ে পড়েছি বিপাকে। গরমের কারণে রাস্তায় তেমন কোন যাত্রী বের হচ্ছে না, ইনকাম কমে যাওয়ায় হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বাসায়।
এদিকে, সীমাহীন তাপদাহের কারণে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ নিয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। রোগীর ভীড় বেশি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারেরা। উপজেলা প:প: স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কামাল উদ্দিন জানান, প্রচান্ড তাপদাহ ও তীব্র গরমে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অনেকেই গরম-ঠাণ্ডায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরকে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি, বিভিন্ন ফল-মুলের জুস খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরেই দিনের তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন।