রাজবাড়ী-ঢাকা পথে চলাচলকারী ‘চন্দনা কমিউটার ট্রেন’ ফরিদপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে রেললাইন আটকে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় জনতা রেললাইনে কাফনের কাপড় পরে শুয়ে ট্রেনটির গতিরোধ করে। প্রায় ৪০ মিনিট পর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা রেললাইন থেকে সরে গেলে ট্রেনটির ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। দাবি মানা না হলে লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা। এর আগে ট্রেনটি চালুর পর দিন ৫ মে ফরিদপুরে যাত্রাবিরতির দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন এলাকাবাসী। বিক্ষোভকারী ও স্থানীয় বাসিন্দা আবরার নাদিম ইতু বলেন, রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার পথে নতুন দুটি কমিউটার ট্রেন চালু হয়েছে। ফরিদপুরের ওপর দিয়ে গেলেও জেলা শহরের এই রেলওয়ে স্টেশনে কোনো স্টপেজ রাখা হয়নি। এতে ফরিদপুরের যাত্রীরা; বিশেষ করে চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা সহজে ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণেই আমরা অনতিবিলম্বে ফরিদপুর রেলস্টেশনে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানাচ্ছি। আরেক বাসিন্দা শরিফ খান বলেন, অন্যান্য ট্রেনের ফরিদপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি রয়েছে। কিন্তু চন্দনা কমিউটার ট্রেনের কোনো যাত্রাবিরতি রাখা হয়নি। একমাত্র এই ট্রেনটিতেই চাকরিজীবীরা সকালে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারবে। এ কারণেই ফরিদপুরে যাত্রাবিরতি দরকার।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা পথে বাণিজ্যিকভাবে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। তখন থেকেই যাত্রাবিরতির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ফরিদপুরের মানুষ। চন্দনা কমিউটার ট্রেনের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই স্থানীয়দের দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূলত একটি ট্রেন দুটি ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হবে দুটি পথে, দুটি নামে। রাজবাড়ী থেকে ট্রেনটি এসে ভাঙ্গায় যাত্রবিরতি নেবে। সেখানে ইঞ্জিন বদলে আবার ঢাকা যাবে। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা পথে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘ভাঙ্গা এক্সপ্রেস’। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী পথে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চন্দনা এক্সপ্রেস’।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছেড়ে শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন পদ্মা সেতু ও মাওয়া স্টেশন হয়ে ৯ টার মধ্যে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছাবে। এর আগে ট্রেনটি রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসবে ভোর ৫টায়। সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেনটি কমলাপুর থেকে আবারও একই পথে ফিরে আসবে। কর্মজীবী যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা এই ট্রেনে চড়ে স্বল্প খরচে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা পথে চলাচলকারী এই কমিউটার ট্রেন ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণির আসনের ব্যবস্থা থাকবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। এই ট্রেনে শোভন চেয়ারে শিবচর থেকে ঢাকার ভাড়া ২০৫ টাকা এবং ভাঙ্গা থেকে ঢাকা ২২৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রেলপথ দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস, সুন্দরবন, রাজশাহী ও নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস চলাচল করে। চারটি ট্রেনেরই ফরিদপুরে যাত্রাবিরতি রয়েছে। কিন্তু চন্দনা কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই।