চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলাতেই বাল্য বিয়ে হচ্ছে গোপনে রাতের বেলায়। বর পক্ষ ও কনে পক্ষ নির্জণ স্থানে গিয়ে বিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন। গত ২০১৮ সালের মে মাসে শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামে অনাড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাল্য বিয়ে মুক্ত উপজেলা ঘোষণা দেয়া শিবগঞ্জ উপজেলায় এখন বাল্য বিয়ের ছড়াছড়ি। প্রায়শই হচ্ছে বাল্য বিয়ে। মসজিদের ইমামকে ডেকে নিয়ে এবং উভয়পক্ষের কয়েকজনকে নিয়েই সেরে নেয়া হচ্ছে বাল্য বিয়েগুলো। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের নামে বিভিন্ন সরকারী-বেচসরকারী সংস্থা বা সমিতি কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ দেখালেও কার্যত কোন কাজেই আসছেনা। শুধু সভা-উঠোন বৈঠক করেই দায়িত্ব যেন শেষ। জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, এসব বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ না হওয়ায়। শিবগঞ্জে কমছে না বাল্য বিয়ে বরং দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইন যেনো খাতা কলমেই। প্রায় প্রতিরাতেই হচ্ছে বাল্য বিয়ে। প্রশাসন বলছে, বাল্য বিয়ে বন্ধের ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সজাগ রয়েছি। অভিযানও চালানো হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অপ্রাপ্ত বর ও কনে বিয়ে হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের বারিক বাজার এলাকার হাউসনগর গ্রামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের আতাউর রহমানের ৯ম শ্রেণি স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মোসাঃ মুর্শিদা খাতুন ও একই গ্রামের ইয়াসিন আলীর ৯ম শ্রেনি স্কুল পড়ুয়া ছেলে শফিকুল ইসলামের বাল্য বিয়ে পড়ানো হয়। এব্যাপারে কনের পিতা আতাউর রহমান, হাউসনগর তেলীপাড়া জামে মসজিদের ইমাম (যিনি বিয়ে পড়িয়েছেন) মোঃ মাহিদুর রহমান ঘটনা স্বীকার করে বলেন, গত ৭ নভেম্বর রাতে বর-কনে উভয় পরিবার সম্মতিক্রমে ৮১ হাজার ৭০০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে আইনী জটিলতার কারণে নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, বাল্যবিয়ে তো হচ্ছেই, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এতো কৈয়ফৎ চাওয়া হচ্ছে কেন? এদিকে, বর শফিকুল ইসলাম বলেন, ইমামকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে নিয়েছি। আমি একাই বাল্য বিয়ে করিনি। এলাকায় অনেক বাল্য বিয়ে হচ্ছে। আমি বিয়ে করেছি তাতে আপনাদের কি? যা পারেন লিখেন। তবে, বিয়ে পড়ানো ইমাম মাহিদুর রহমান ৬’শ টাকার কথা স্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার আরো ২০/২৫জন জানান, শুধু এটি নয়, এলাকায় প্রতিদিন-ই বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জেনেও না জানার ভান করছেন। উপজেলা প্রত্যাঞ্চল থেকে একাধিক গোপন সূত্রে জানা গেছে, আগের চেয়ে বর্তমানে বেশি বাল্যবিয়ে হচ্ছে। তবে, বিয়ে পড়ার ধরণটি অন্য রকম। এক মাত্র বর-কনের পরিবার গোপন আলোচনার মাধ্যমে গোপন স্থানে মাত্র ৫/৬ জনের উপস্থিতিতে এসব বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এদের মধ্যে থাকছেন, একজন ইমাম, উভয় পক্ষের একজন করে স্বাক্ষী। গোপন সূত্রে আরো জানান, নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) বিয়ে রেজিষ্টার না করে খসড়া কাগজে তথ্য সংগ্রহ করে রেখে দিচ্ছেন। যখন পূর্ণ বয়স হবে তখন তাদের নিকাহ্ রেজিষ্টার হবে বলে জানা গেছে। তবে, এব্যাপারে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্টার (কাজী) জানান, কোন বাল্যবিয়ের ব্যাপারে আমরা কেউ কোন ধরনের খসড়া খাতা ব্যবহার করি না। এমন কি আমরা বাল্যবিয়ের সংবাদ পেলে প্রশাসনের সহায়তায় বন্ধ করে দিই। এমন কি বাল্যবিয়ে রোধে আমরা প্রচার অভিযান অব্যহত রেখেছি। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হায়াত জানান, বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বর-কনে উভয় পক্ষকেই জেল ও অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি সভায় বাল্যবিয়ে রোধে প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জোরালো নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে, বাল্য বিয়ে রোধে একটি সমস্যা হচ্ছে, বর-কনে উভয় জেলা বা উপজেলার বাইরে গিয়ে গোপনে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করছে। আমরা এব্যাপারেও খোঁজখবর নিচ্ছি।