তাল গাছে বাসা বুনতে ব্যস্ত বাবুই পাখি। সেই বাসা দেখতে যেমন, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসাটি, শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি। গোধূলি বেলায় তাল গাছটির সামনে তার সুরেলা কন্ঠে কিচিরমিচির ডাক শোনা যায়। দেখা মেলে শৈল্পিক বাসায় সঙ্গিনীর সঙ্গে প্রণয়ের দৃশ্য। তখন মনে পড়ে রজনীকান্ত সেনের বিখ্যাত স্বাধীনতার সুখ কবিতা-বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও, রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই পাখির প্রধান আস্তানা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ যেমন এখন দেখা যায় না, তেমনি দেখা মেলে না ছড়ার নায়ক বাবুই পাখিও। গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পীমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণে মানববস্তি বাড়ায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণেই এ পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। নাচোলের বয়োবৃদ্ধ পেশাদার একজন ডাক্তার ও সাংবাদিক আবদুর রহমান মানিক জানান, বরেন্দ্র জনপদের তাল গাছগুলোতে এই কারিগর পাখিগুলো বাসা বেঁধে থাকে। তবে আগের তুলনায় এখন অনেক কম দেখা যায়। একজন কৃষিবিদ জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরামর্শ ছাড়ায় মানুষ অতিমাত্রায় আবাদি জমিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ও বনভূমি ধ্বংস করার কারণে জীব বৈচিত্র্য বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। একজন বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা জানান, সরকারি নির্দেশনায় পাখি নিধন ও তাদের আবাসচ্ছল ধ্বংসকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। রাস্তার দুই ধারে গাছ লাগিয়ে পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।