আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ কে বাদ দিয়ে নওগাঁকে আমের রাজধানী বলায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসী।
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সারা দেশ ও বিদেশে আমের সুখ্যাতি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের। চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বলা হয় আমের রাজ্য আর কানসাটকে বলা হয় এশিয়ার সর্ববৃহৎ আমের বাজার। সেখানে রয়েছে ২০০ বছরের বেশি সময়ের বাগান।
এদিকে, ব্যারিস্টার সুমন নওগাঁয় ফুটবল খেলতে গিয়ে একটি ছোট আমবাগান থেকে ধারণ করা ৫ মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। কয়কদিন আগে পোস্ট করা ভিডিওতে তিনি রাজশাহী ছাড়িয়ে নওগাঁয় বেশি আম উৎপাদন হয় এবং নওগাঁকে ‘আমের রাজধানী’ বলে উল্লেখ করেন। আর এ মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
ওই ভিডিওতে সুমনকে আরও বলতে শোনা যায়, নওগাঁকে অনুসরণ করে তাঁর নিজ এলাকা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটকেও আমের রাজধানী বানাতে চান। এখানে তিনি এক কৃষকের সাক্ষাৎকার নেন। সাক্ষাৎকার নেওয়া ব্যক্তিও বলেন, নওগাঁয় ২০—২৫ বছর ধরে আম চাষ হচ্ছে।
ব্যারিস্টার সুমনের পোস্ট করা ভিডিওটির মন্তব্যের ঘরে মো. পারভেজ আলম নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘জন্মগত ইতিহাস বলে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আপনি কোথায় পেলেন নওগাঁ, আল্লাহ ভালো জানেন।’ মূসা মিয়া নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘এমন বিকৃত মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী—এটা আপনাকে মানতেই হবে।’
বাবর বাবু নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আমরা সবাই জানি আমের স্বর্গ বা রাজধানী হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ। অতিরিক্ত তেল মারতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা ঠিক না। আপনি একবার চাঁপাই আসুন।’ আব্দুল আহাদ নামের একজন লেখেন, ‘নানিবাড়ির গল্প আম্মাকে না শোনানোই ভালো।’
শাখাওয়াত জামিল দোলন লিখেছেন, ‘আপনি ব্যারিস্টার সুমন, আপনাকে বলছি, আরও বেশি করে আপনাকে লেখাপড়া করা দরকার। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ নয়। ভুল তথ্যের জন্য আপনাকে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক বিশিষ্টজনেরা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাধারণ সচেতন মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
শামিম শাহরিয়ার নামে একজন লিখেছেন, ‘এইতো কদিন আগে নওগাঁর লোকজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমের আঁটি কুড়িয়ে নিয়ে গেল। এত তাড়াতাড়ি রাজধানী হয়ে গেছে?’
মো. ফরহাদ আলী লিখেছেন, ‘আমের রাজ্য—রাজধানী দুটোই চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মাফ চেয়ে আরেকটা ভিডিও বানান।’ আল আমিন নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনি শিক্ষিত মানুষ, অশিক্ষিত মানুষের মতো আচরণ কেন করলেন সুমন ভাই।’ মোতালেব খান নামে একজন লিখেছেন, ‘ভাই গালি দেওয়া ছেড়ে দিয়েছি। ক্যাপশন চেঞ্জ না করলে আগের রূপ ধারণ করব।’
মোতাহারুল ইসলাম নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভুল তথ্যের জন্য আপনার নামে মামলা দেওয়া দরকার। সারা জীবন জানলাম আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ।’
বেটার চাঁপাইনবাবগঞ্জ হেল্পলাইন নামের একটি পেজ থেকে মন্তব্যে লেখা হয়েছে, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর পক্ষে থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নওগাঁকে আমের রাজধানী বলার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে পোস্ট দিন। নতুবা আপনার বিরুদ্ধে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তীব্র জনমত গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ।’ ওই ভিডিওটিতে ৪০ হাজারের বেশি লাইক, ৩ হাজারের বেশি কমেন্ট ও ১ হাজারের বেশি শেয়ারসহ ৫ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন। ২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঠিক ইতিহাস না জেনে নওগাঁ কে আমের রাজধানী বলায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। ব্যারিষ্টার সুমনকে কড়া জবাব ও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।