নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে আদালতে জমা দেয়া আইয়ুব আলী হত্যাকান্ডের বিষয়ে নালিশী মামলা আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য নাটোরের পিবিআই পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নাটোরের বাগাতিপাড়া আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই নির্দেশ দেন। আইয়ুব আলী জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা, তিনি রাজশাহীর হরিয়ানা চিনিকলের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী মোছা:শাহানাজ পারভীন (৫০) এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, বাগাতিপাড়া উপজেলার স্যানালপাড়া গ্রামের মো: মহিদুল ইসলাম (৩৬), মাড়িয়া গ্রামের মো: মিজানুর রহমান (৩৬) ও মো: মাইনুল ইসলাম (৩২) এবং মো:আব্দুল মজিদ দীর্ঘদিন থেকে তার স্বামী আইয়ুব আলীর কাছে মিথ্যা অভিযোগে টাকা দাবী করে আসছিল। পরে প্রধান অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তারা আরো শক্তিশালী হয়। তাদের পরামর্শে শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি তার স্বামীকে এমপির বাড়িতে ডেকে পাঠায়। অভিযুক্তরা ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার দিকে তিনি ও তার স্বামী এবং সাক্ষীদের অভিযুক্তরা এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে নিয়ে যান। এ সময় এমপি বকুল সকলের সামনে বলেন, মাড়িয়া গ্রামের সবাই চোর। এই শালাকে বেধে ফেল। সাদা স্টাম্পে সই নে। সই না দিলে গাছে ঝুলিয়ে মারপিট কর। অভিযুক্তরা তার স্বামী আইয়ুব আলীকে বেঁধে ফেলে। এ সময় এমপি বকুল নিজে হাতে তার স্বামীকে চড় থাপ্পর মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে তাকে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময়ই তিনি বাগাতিপাড়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ এমপির বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। স্বামী হত্যার বিচারের আশায় তিনি গত ১ জুন বৃহস্পতিবার বাগাতিপাড়া আমলী আদালতে পুনরায় নালিশী অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। বিচারক সেদিন কোন আদেশ না দিয়ে এ বিষয়ে ১৫ জুন বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়ার জন্য তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। সেই অনুযায়ী বিচারক বৃহস্পতিবার মামলাটি পিবিআই পুলিশ সুপারকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন এবং আগামী ২৭জুলাই মামলার পরবর্তি তারিখ নির্ধারণ করেছেন। বাদীর আইনজীবী সুফি মোঃ মমতাজ রায়হান সিনা বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আইয়ুব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, কয়েক বছর আগে তার বড় ভাইয়ের বিয়েতে আসা একজন অতিথির সাথে অভিযুক্ত মহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মাইনুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদের পরিচয় হয়। তারা ঐ অতিথির কাছে চাকুরী পাওয়ার আশা কিছু টাকা দেন। পরে চাকুরী ও টাকা ফেরত না পেয়ে তার পিতার কাছে অন্যায় ভাবে সেই টাকা ফেরত দেয়ার দাবী জানায়। তার পিতা বা পরিবারের কেউ এই চাকুরীর জন্য টাকা দেয়ার বিষয়টি অবগত ছিলো না। সেই টাকার জন্যই তার অসুস্থ্য পিতাকে জীবন দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে করা এই অভিযোগ একেবারেই সত্য নয়। তার বাড়িতে সেদিন মারপিট বা হত্যাকান্ডের কোন ঘটনা ঘটেনি। কারো বুদ্ধিতে প্ররোচিত হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তার বিরুদ্ধে আদালতে এমন অসত্য অভিযোগ করা হয়েছে।