মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘শাহনেয়ামতুল্লাহ’ কলেজের নিয়োগ কার্যক্রম অন্তবর্তিকালীন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক সুমন কুমার কর্মকার। সোমবার দুপুরে এই আদেশ দেন তিনি। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জ¦ালকারীসহ নানা অপকর্মে বিতর্কিত ব্যক্তি বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান সভাপতি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি এবং কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের উপর মানষিক ও আর্থিক নির্যাতন এবং কলেজের অধ্যক্ষকে নামেমাত্র দায়িত্ব দিয়ে নিজেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ, গভর্নিং বডির একজন সদস্যের মালিকানাধিন একটি এনজিও ‘প্রয়াস’কে দিয়ে কলেজের আভ্যন্তরিন বিষয় নিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছামত সকল কাগজপত্র তৈরী করে অধ্যক্ষকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা, কলেজের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদী দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা, শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে বেতন-ভাতাদী আংশিক পরিশোধ করাসহ নানা অভিযোগ উঠে। কোন নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়াই নিজ পছন্দমত লোকদের নিয়ে গঠিত গভর্নিং বডির আস্থাভাজন সদস্যদের নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষসহ কয়েকটি কর্মচারী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে গভর্নিং বডি। এরই অংশ হিসেবে গত ২৭/১২/২০২১ইং তারিখ স্থানীয় ‘দৈনিক চাঁপাই চিত্র’ ও ২৮/১২/২০২১ইং তারিখ জাতীয় দৈনিক ‘দৈনিক প্রথম আলো’ ও ‘দৈনিক জনকন্ঠ’ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
প্রেক্ষিতে, নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ চেয়ে কলেজের অভিভাবক সদস্য মো. জিকেন আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৪৪/২০২২ নম্বর মামলা দায়ের করেন। এদিকে, আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের সামনে সভাপতি ও গভর্ণিং বডির নানা অনিয়ম ও অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরার জন্য কলেজের ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী পক্ষভূক্ত হয়ে বাদীতে সমর্থণ করে স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি নিয়ে রবিবার (২২মে) আদালতে শুনানী হয়। আদেশের দিন ধার্য হয় ২৩মে সোমবার। সোমবার দুপুরে এই আদেশ দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
মামলার আইনজীবী সৈয়দ তৌহিদুজ্জামান জানান, মামলার বাদী শাহ-নেয়ামতুল্লাহ কলেজের অভিভাবক সদস্য মো. জিকেন আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৪৪/২০২২ মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়বস্তু শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডি সম্পূর্ণ বে-আইনী মর্মে ঘোষণা এবং উক্ত গভর্ণিং বডি কর্তৃক ২টি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বে-আইনী এবং ঐ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিমূলে কোন নিয়োগ কার্যক্রম করিতে না পারে, সেজন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। প্রেক্ষিতে রবিবার ২২মে উভয়পক্ষের শুনানী হয় এবং ২৩মে বিজ্ঞ আদালত উক্ত গভর্নিং বডির অধিনে ঐ বিজ্ঞপ্তিমূলে কোন নিয়োগ কার্যক্রম না করিতে পারে, সেই মর্মে অস্থায়ী অন্তবর্তিকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দ্বারা বারিত করেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদকে। তিনি আরও জানান, এই আদেশের ফলে এই কমিটির অধিনে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এদিকে, বিজ্ঞ আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশের কপি সোমবার বিকেলে হাতে পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন শাহ-নেয়ামতুল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোহাঃ হাকিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, শাহ-নেয়ামতুল্লাহ কলেজের সভাপতি বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান এর নেতৃত্বে কলেজের গভর্ণিং বডির কিছু সদস্য এবং কয়েকজন শিক্ষকের অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি, অত্যাচারসহ নানা অভিযোগের বিষয়বস্তু তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় স্থানীয় ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায়। এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কলেজের সভাপতি প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদপত্র পাঠাতে বাধ্য করেন কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোহাঃ হাকিকুল ইসলামকে (যদিও কোন পত্রিকায় বা অনলাইনে প্রতিবাদপত্রটি ছাপানো হয়নি)। পরবর্তীতে কলেজের অধ্যক্ষ প্রতিবাদপত্রটি প্রত্যাহার করে লিখিতভাবে প্রতিবাদ প্রত্যাহারপত্র পাঠান ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মিডিয়া কার্যালয়ে। এছাড়াও কলেজের সভাপতির বিভিন্ন অবৈধ ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, এই বিতর্কিত ব্যক্তিকে শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের সভাপতি মনোনয়ন দেয়ায় কলেজ গেটের সামনে মানববন্ধন করে স্থানীয় সচেতন মহল।
