কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে প্রবল ভাঙন। বাড়িঘর, আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সরিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছে না ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষজন। বন্যার পানি নামতে না নামতেই বানভাসিদের দুর্ভোগের মধ্যেই ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসী ভাঙনে দিশেহারা অসংখ্য পরিবার। জানা গেছে, চরটির চারদিকে বন্যার অথই পানি। বন্যার দুর্ভোগের মধ্যেই দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনকবলিতদের আহাজারিতে যেন ভারী হয়ে উঠেছে চারদিক। এ চরটি উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, হাতিয়া ইউনিয়ন এবং চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় খোঁজ নেওয়ার যেন কেউ নেই। অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। ভিটেমাটির কোনো চিহ্ন না থাকায় অনেক পরিবারের নিজের বলে আর কিছুই নেই। ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে চোখের পলকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়িসহ শেষ সম্বলটুকুও। সারারাত না ঘুমিয়ে আসবাবপত্র, বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ারও সময় মিলছে না।
চরবাসীরা জানান, নিজের কোনো বসতভিটা না থাকায় হকের চরের গুচ্ছগ্রামে সরকারি ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে সে ঘরও গেল। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের চরটাও ভাঙতে ভাঙতে ছোট হয়ে আসছে। ইউপি চেয়ারম্যান মোজ্জাফর হোসেন জানান, চলতি বন্যায় তার ইউনিয়নে ১৯৭ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এর মধ্যে হকের চরে ৯০ পরিবার, দক্ষিণ নামাজের চরে ৪৭ পরিবার ও দৈখাওয়ার চরে ৬০ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। এছাড়া ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ নদীগুলোতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলার ৯ উপজেলা ৫৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৬২.৭৫ বর্গকিলোমিটার। বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১০০টি। নদীভাঙনের শিকার হয়েছে ৪৫৮টি পরিবার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। বন্যার্তদের সেবায় ৮৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। জেলার ৯ উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেওয়া হয়েছে শুকনা খাবার বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ৫৮৭ মেট্রিকটন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ২৪ হাজার ৩৬০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। এছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৫০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২০ হাজার ১২৬টি জেরিকেন সরবরাহ, ৫৫টি নলকূপ মেরামত করা হয়েছে, নতুন নলকূপ ছয়টি এবং ল্যাট্রিন ছয়টি স্থাপন করা হয়। এছাড়া ৬৫টি হাইজিন কিটস বক্স বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।