কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার সন্ধ্যায় শাহপরাণ হলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত বলে ঘোষণা দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব। এর আগে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে আবাসিক হল দখলে নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে অভিযান চালান। বেলা ৪টায় ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে ছাত্র হল অভিমুখে রওনা দেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে শাহপরাণ হলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কক্ষে অভিযান চালানো হয়। এসময় বিপুল পরিমাণ মদের বোতল, গাঁজা, দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেগুলো হল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। সংবাদ সম্মেলনে গালিব বলেন, শাহপরাণ হলের ২১০, ২১১, ২১৫, ৪২৩, ৪২৪, ৪২৭ ও ৪২৯ নম্বর কক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু হলের বিভিন্ন কক্ষে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে দুইটি হল থেকে একটি শটগান, একটি রিভলবার, একশত স্টিলের পাইপ, ১০টি রামদা, ১২টা চাকু, তিনটা চেইন, একটা হাতুড়ি ও একটি হেলমেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া দেড়শতের অধিক মদের বোতল, ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হল প্রশাসনের সহযোগিতা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব অবৈধ সরঞ্জাম উদ্ধার করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খতিয়ে বের করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে। ক্যাম্পাসে অস্ত্র ও মাদক আনয়নকারীদের আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ এবং হলে রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে শাহপরাণ হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি কৌশিক সাহা বলেন, আমাদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা এসব অবৈধ সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। কে বা কারা এইসব হলে নিয়ে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে বিশ্ববিদ্যালয়। পরে শাহপরাণ হল প্রাধ্যক্ষ কৌশিক সাহা ও বঙ্গবন্ধু হল প্রাধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারনামায় হল দুটিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
এদিকে, দুপুর আড়াইটার দিকে আবাসিক হল ছেড়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান। একটি সাদা মাইক্রোবাসে ক্যাম্পাসে পেছনের টিলারগাঁও এলাকা দিয়ে তারা পালিয়ে যান বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিকাল ৩টার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনেই হল ত্যাগ করেছি। আমরা কোনো হিংস্র রাজনীতিতে বিশ্বাসী না। তাই আমরা হল ত্যাগ করেছি। অন্যদিকে, কোটা আন্দোলন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাবেক অধ্যাপক ডক্টর মো. জাফর ইকবালকে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা আদায় করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এই জানাজায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এসময় সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, নর্থ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং, হবিগঞ্জ সরকারি কলেজ এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ, মেজরটিলা স্কলারসহোম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিসহ সিলেটের বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংহতি জানায়।