দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর। দীর্ঘদিন ধরে এই শুল্ক স্থলবন্দরের কার্যক্রম চলছে মাত্র ২০ একর জায়গায়। দিনে দিনে এই বন্দর দিয়ে আমদানী কার্যক্রম বৃদ্ধি হলেও বাড়েনি জায়গার পরিমান। ফলে ব্যবসার পরিধিও বাড়ছেনা। ইচ্ছা থাকলেও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাড়াতে পারছেন না এমনটায় বলছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, ব্যবসার পরিধি বাড়লে, বাড়বে সরকারী রাজস্বের পরিমানও। নেই বন্দরের পণ্য ও স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্দরের শত শত শ্রমিকরাও রয়েছেন নানান সেবা থেকে বঞ্চিত। ব্যবসার পরিধি বাড়াতে জায়গার পরিমান বৃদ্ধি, পণ্য, স্থাপনা ও ব্যবসায়ীদের মালামালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবী বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। এ বন্দরে তালিকাভুক্ত ৭০০ শ্রমিক থাকলেও দৈনিক কাজ করে প্রায় ৬’শ শ্রমিক। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৩৫০-৩০০ ভারতীয় ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে যাতায়াত করে। এর অধিকাংশ পাথর বোঝাই ট্রাক। এখানে শ্রমিক সংগঠন ৩১টি। তবে ওই একত্রিশটি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নিয়ে ‘সমন্নয় শ্রমিক সংগঠন’ আছে একটি।
সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আব্দুল আওয়াল বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাত্র ২০ একর জায়গা নিয়ে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুল্ক স্থলবন্দর। ২০ একর জায়গা নিয়ে একটা স্থলবন্দর পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের প্রায় সাড়ে ৩’শ একর জায়গায় বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা হয়। জায়গা সংকটের কারণে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো যায় না, ভবিষ্যতে বন্দরের জায়গা বাড়লে ব্যাবসার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। আমদানিকারক আজিজুর রহমান বলেন. সোনামসজিদ স্থলবন্দরের জায়গার পরিমান কম হওয়ায় আমদানি পণ্য খালাসের সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নির্ধারিত হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যে আমদানি পণ্য খালাস করতে হয়। বেঁধে দেয়া সময় পার হয়ে গেলে গুনতে হয় মোটা অংকের জরিমানাও। যদি অতিরিক্ত জায়গা থাকতো, যথাসময়ের মধ্যে আমদানি পন্য খালাস করা যেতো। ফলে ভোগান্তিও হতোনা আর অতিরিক্ত টাকাও লাগতো না। শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আপত্তি আছে শ্রমিক নেতাদের। তাদের দাবি, সোনামসজিদ বন্দরে নেই কোন চিকিৎসালয়, কোন অ্যাম্বুলেন্সও। চলতি বছরের ১৩ জুলাই ভারতীয় ৩টি ট্রাকে স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে আগুন লাগে।
প্রতিটি ট্রাকে ৪১ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ব্লিচিং পাউডার ছিল। বন্দরের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্দরে শ্রমিকরা কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়লেও এখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের। বন্দরে একটি মেডিকেল, অ্যাম্বুলেস ও ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নির্মাণ হলে অনেকটায় উপকার হবে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ল্যান্ডপোর্ট বর্ডার ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সশিপমেন্টের- স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার বন্দর এলাকায় বন্দরের ভেতরে শতশত কোটি টাকার মালামাল থাকে। এখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্দর এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ কেন্দ্র থাকা দরকার। সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার টার্গেট ছিল ৮২৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৭১ কোটি ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। সোনামসজিদ বন্দরের পানামা পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের জায়গা মাত্র ১৯ দশমিক ১৩ একর। জায়গা সংকটের কারণে ভোগান্তি কমাতে সরকারের কাছে আরও প্রায় ২২ একর জমির আবেদন করা হয়েছে। পানামার মহাব্যবস্থাপক বেলাল উদ্দীন বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। বেশ কয়েকদিন আগে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীকে নিয়ে বন্দরের ভিতর এলাকা পরিদর্শন করেছি। ওইসব এলাকায় ১১টি স্থানে পাম্প বসানো আছে। আরও পাঁচটি স্থানে পাম্প বসানো হবে। এছাড়াও ৪০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আরও দুটি ট্যাংকি বসানো হবে।