চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলগুলোয় কৃষিতে পানির চাহিদা মেটাচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ চালিত ‘পাতকুয়া’। এতে কৃষকদের জামিতে খরচ অনেকটায় কমে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার আবহাওয়া বেশি রুক্ষ হওয়ায় এসব এলাকা কে ‘ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র’ বলা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের জমি গুলেতে চাষাবাদের জন্য পানি সঙ্কটের কারণে পাতকুয়ার ব্যবহার করছে। ফলে কৃষকরা অনাবাদি জমি আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
এ কুয়ার ব্যবহারে লাগেনা জ¦ালানী তেল বা বৈদ্যুতিক সংযোগ। কেবল মাত্র সোলার প্যানেল ও পাম্প ব্যবহার করে কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারেন কৃষকরা। এ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটানো গেলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার বিঘা অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মত প্রকাশ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সুত্রে জানা গেছে, পাতকুয়া ব্যবহার করে কম সেচ লাগে এমন ফসল চাষ করা যায়। জেলার ৬২ টি পাতকুয়া ব্যবহার করছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩২টি, নাচোল উপজেলায় ২০ ও গোমস্তাপুর উপজেলায় ১০টি পাতকুয়া রয়েছে। এ কুয়ার আরেক নাম ডাগওয়েল। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে গিয়ে ভোগান্তি বাড়ে। এছাড়াও জ্বালানি তেল পুড়িয়ে শ্যালো মেশিনের মধ্যেমে পানি উঠাতে অনেক বেশি খরচ হয়। যার কারণে কৃষকদের চাষের খরচ অনেক বেড়ে যায়। পাতকুয়া থেকে চাষিরা বিনামূল্যে পানি পাচ্ছে। পানির অভাবে অনেক জমিতে চাষ হত না। বর্তমানে পাতকুয়া পাওয়ার পর থেকে জমিতে সব ধরনের চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। আরেক কৃষক আসাদুল্লাহ বলেন; ‘সূর্য ওঠার পর থেকে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত কুয়া থেকে পানি পাওয়া যায়। এক ঘণ্টায় প্রায় এক বিঘা জমি ভেজানো সম্ভব হয়। আর পানি নেয়ার জন্য কোনো ধরনের টাকাও নেয়া হয় না। তবে পাতকুয়ার যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে সেটি কেনার জন্য টাকা লাগে। এ কুয়া থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। ফজলু নামের পাতকুয়ার মেশিনের এক অপারেটর এর ব্যবহার সম্পর্কে বলেন; ‘যন্ত্রটি দেখতে ছাতার মত। গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন করে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কুয়ার পানি থেকে স্বল্প সেচ লাগে এমন ফসলের চাষাবাদ করা যায়। তিনি আরও বলেন; ‘নির্মিত হওয়া পাতকুয়া ১১৮ ফুট গভীর আর ব্যস হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি। আর ছাতা দিয়ে (ডাগওয়েল) বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। পাতকুয়ার এ পানি পাম্প করার পর তা সরবরাহ করার জন্য ট্যাংকি থেকে ৩ ইঞ্চি ডেলিভারি পাইপ আছে। এ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার ভূগর্ভস্থ্য সেচনালা করে দেয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা ফিতা পাইপ ব্যবহার কররে সেচ কাজ করতে পারছে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মাদ সায়েম বলেন, ‘পাতকুয়ার পানি উত্তোলন কাজে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ শক্তির পরিবর্তে সৌরশক্তি ব্যবহার হয়। যার ফলে এ কুয়াটি পরিবেশবান্ধব। পাতকুয়া নির্মাণে তেমন কোন খরচ নেই। বছরে প্রতিটি পাতকুয়া থেকে ২ লাখ লিটার পানি পাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় ৬২টি পাতকুয়ার মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪৯৪ বিঘা (২’শ হেক্টর) অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কৃষক এ কুয়া ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন। পাতকুয়ার চাহিদা থাকায় আরও ২৫০ টি কুয়া নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাতকুয়ার ব্যবহার বাড়ানো গেলে বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানি সঙ্কটে ভুগেন। ওই সব এলাকার লোকজন পাতকুয়ার পানি খাবার পানি হিসাবে পান ও বাড়ির কাজে ব্যবহারও করতে পারবেন। পাতকুয়ার মাধ্যমে জেলার সকল অনাবাদী জমিগুলো আবাদের আওতায় আসলে জেলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং প্রায় বিনা খরচে কৃষক জমি আবাদ করে লাভবান হবে বলে আশা কৃষিবিদদের।