নানা প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে দুই হাতের ১০টি আঙ্গুল ও হাতের তালুর অর্ধেক না থাকা জিহাদ এস.এস.সি’তে গোল্ডেন জিপিও ৫ পেয়েছে। তবে ভাল ফলাফল করলেও কাটেনি তার হতাশা। আর সে হতাশা হলো আর্থিক সংকট। আর এই কারণেই ভবিষ্যতে আর লেখাপড়া করতে পারবে কি না? তার প্রবল ইচ্ছা একজন ভাল প্রকৌশলী হওয়ার। জিহাদ হাসান হলো শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিযনের আজমতপুর গ্রামের তাইফুর রহমান ও পারভিন আখতারের ছেলে। পিতা দীর্ঘ ২০বছর যাবত এমপিওভুক্ত না হওয়া শাহাবাজপুর ইউনিযনের আজমতপুর দারুল উলুল দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী করেন এবং মা বাড়িতে সেলাই মেশিন চালান। জিহাদ হাসান জানান আমি জন্ম থেকে পঙ্গু। একমাত্র মায়ের ইচ্ছায় আমি এতদুর পর্যরÍ লেখাপড়া করতে পেরেছি। আমার ইচ্ছা আমি ভাল প্রকৌশলী হবো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাবা মাযের পরিবার নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। আমাদের ছোট একটুকরা বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই।তাই আমি সমাজের বিত্তবান ও সরকার সহ সকলের কাছে দোয়া ও সাহায্য প্রার্থী। জিহাদ হাসানের মা পারভিন আখতার জানান পঙ্গুত্ব অবস্থায় জিহাদ জন্ম গ্রহন করায় সমাজের মানুষ আমাকে দায়ী করেছে। এমনকি আমার স্বামী তাইফুর রহমানও ১০দিন পর্যন্ত দেখতে যায়নি।তাতে আমি ভেঙ্গে পড়িনি। তবে মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছি। অতি কষ্টে জিহাদকে বড় করে ৬ বছর বয়সে বি কে স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করি। সেখান থেকে সে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করে। পরে তখন তাকে শাহাবাজপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করি। সেখান থেকে সে অষ্টম শ্রেণীতেও বৃত্তি লাভ করে। শত কষ্ট হলেও ছেলে ভাল ফলাফল করায় এভাবেই অতিকষ্টে এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পুরন করায়। পরীক্ষায় আমার ছেলে গোল্ডেন জিপিও ৫ পাওয়ায় আমি খুব আনন্দিত এবং আমি সবার কাছে দোয়া প্রার্থী। এব্যাপারে শাহাবাজপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি বলেন জিহাদ হাসান খুব মেধাবী ও সাহসী ছাত্র। দরিদ্রতা ও পঙ্গুত্ব তাকে দমাতে পারেনি।শত প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিও ৫ পেয়েছে। আমি তার ভবিষ্যত উন্নতি কামনা করছি। শিশু ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ও ডেলটা মেডিকেল সেন্টারের মালিক ডা: মাহফুজ রায়হান বলেন, প্রতিবন্ধী জিহাদ হাসান তার ফলাফলের মাধ্যমে প্রমান করে দিয়েছে যে প্রতিবন্ধী সমাজের বোঝা নয়, আর্শীরবাদ। আমি আমার ডেলটা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা জানাবো এবং তার লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, দরিদ্রতা ও প্রতিবন্ধীত্ব মেধাশক্তিকে বাধাপ্রাপ্ত করতে পারে না। তা প্রমান করেছে প্রতিবন্ধী জিহাদ হাসান। জিহাদ হাসান আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানাবো এবং তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।