1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি ‘শকুন’ এখন বিলুপ্তির পথে! - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি ‘শকুন’ এখন বিলুপ্তির পথে!

মুঃ শফিকুল ইসলাম-(নিজস্ব প্রতিনিধি)
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ২৫৯ বার পঠিত

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি ‘শকুন’ এখন বিলুপ্তির পথে!

শকুন! নাম শুনেই অনেকের কপাল কুচকে গেছে। উড়তে পারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি নাম শকুন। শকুন যে একটি পাখি তাই অনেকে ভুলে গেছেন। এ পাখিটি নোংরা খাবার খায় বলেই শুধু মনে করেন অনেকে। অনেকেই একে শত্রু মনে করলেও আসলে এই পাখিটি পারতপক্ষে পরিবেশ এবং আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মিত্র। শকুনকে অনেকেই অশুভ পাখি মনে করলেও এটি একটি শুভ পাখি। এই বর্জ্যভুগ পাখিটি পরিবেশকে পরিষ্কার করে দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। তাই শকুনকে পরি”ছন্নতাকর্মীও বলা হয়। এরা মূলত মৃত প্রাণীর মাংস খেয়েই বেঁচে থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই এরা অনেক জীবাণু ধ্বংস করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদের পাকস্থলী অ্যানথ্রাক্স, খুরারোগ, কলেরাসহ নানান রোগের জীবাণু হজম করে ফেলতে পারে। যেখানে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখলেও তা একশ বছর সংক্রমণক্ষম থাকে। তাই মৃতদেহে এসব রোগের জীবাণু থাকলেও তা তারা খুব সহজেই হজম করে ফেলতে পারে। এতে করে মৃতদেহে থাকা এসব রোগ পরিবেশে ছড়িয়ে পরতে পারে না।
সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারিদিকে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে। পাখিগুলো তীক্ষè দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি বিশেষ। এদের বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। পরিবেশের বর্জ্য খেয়েই এরা বেঁচে থাকতে পারে। তবে গত প্রায় তিন যুগে আমাদের দেশ থেকে শকুন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়। সারা বিশ্বেই প্রায় ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ শকুন আজ বিলুপ্ত। এর প্রধান কারণ গবাদিপশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের যে প্রতিষেধক দেয়া হয় সেগুলো শকুনের জন্য ক্ষতিকর। ইদানীং বিভিন্ন দেশে, গবাদি পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ‘ডাইক্লোফেনাক’ নামের ব্যথানাশক ঔষধ। আমাদের দেশেও ডাইক্লোফেনাকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে। একই বিষক্রিয়া দেখা গেছে কিটোপ্রোফেনের বেলাতেও। আর এসব পশু মারা যাওয়ার পর শকুন সেগুলো খেয়ে মারা যাচ্ছে। এ কারণে ডাইক্লোফেনাক ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত পশুর মাংস শকুনের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ডাইক্লোফেনাক দেয়া হয়েছে, এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। সারাবিশ্বে যেখানে ৪ কোটির মতো শকুন ছিল। সেখানে এর সংখ্যা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজারের কাছাকাছি। বাংলাদেশে এর সংখ্যা ২০০ এর মতো।
কোনো পশুর মৃতদেহ দেখলেই সেখানে হামলে পড়ে শকুনের দল ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিন-এর গবেষক ড. লিন্ডসে ওক তার এক গবেষণায় প্রমাণ করেন, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহারই শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। ভারতে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ শকুন মারা যাওয়ার কারণও ডাইক্লোফেনাক। এই মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পৃথিবীর অনেক দেশেই পশু-চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেনের পরিবর্তে সমান কার্যকর, অথচ শকুন-বান্ধব ‘মেলোক্সিক্যাম’ নামক ঔষধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে পশ্চিম গোলার্ধে ৭ প্রজাতির এবং পূর্ব গোলার্ধে (ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া) ঈগলের সঙ্গে সম্পর্কিত ১১ প্রজাতির শকুন রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে প্রায় ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে। এর মধ্যে ৪ প্রজাতি ¯’ায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। তবে শুধু গ্রীফন প্রজাতির শকুনই মাঝে মাঝে দেখা যায় (পরিপ্রেক্ষিত ২০১০)। এসব প্রজাতির শকুনই সারা বিশ্বে বিপন্ন।
হাতে গোনা থাকা শকুনের প্রজাতিও আজ বিলুপ্তির পথে শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে। মহীরুহ বলে পরিচিত বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে শকুন বাসা বাঁধে। সাধারণত গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১ থেকে ৩টি সাদা বা ফ্যাকাশে ডিম পাড়ে। আমাদের দেশে স্থায়ী প্রজাতির মধ্যে রাজ শকুন মহাবিপন্ন। এটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্যে ঠোঁটে পাথরের টুকরো বহন করে ও ডিমের উপর নিক্ষেপ করে।
বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস এসেছে যেভাবে সারা বিশ্বে, শকুনকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবার আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক সংগঠন এগিয়ে এসেছে শকুন সংরক্ষণের কাজে। বন বিভাগের সহায়তায় অসুস্থ এবং আহত শকুনদের উদ্ধার করে চিকিৎসা এবং পরিচর্যা করে সুস্থ করে তুলছে একদল পশু চিকিৎসক।
এছাড়াও তারা বিভিন্ন জায়গায় শকুনের প্রজননের সময়টাতে খাবার দিয়ে থাকে। মাসে তিনটি গরু দেয়। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে পরের বছর মার্চ মাস পর্যন্ত চলে এই কাজ। এতে করে দেশে শকুনের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সরকারিভাবেও নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে শকুন সংরক্ষণের জন্য। নিষিদ্ধ করা হয়েছে শকুন হত্যা করাও। শকুন সংরক্ষনে প্রকৃতিপ্রেমীসহ সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান সচেতন মহলের।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!