নওগাঁর সাপাহারে রাতের আঁধারে প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাংচুর, মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের আলাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃতঃ দারাজ আলীর ছেলে মোঃ মোস্তফা (৫০) জানান, শনিবার (১৩ মে) দিবাগত মধ্য রাতে প্রতিপক্ষ হাপানিয়া মাদরাসার সহকারী প্রিন্সিপাল তোজাম্মেল হক, আলাদিপুর দাখিল মাদরাসার অধ্যক্ষ জাইদুর রহমান, মোস্তফা মন্টুসহ আরোও কয়েকজন ব্যক্তি রাতের আঁধারে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং আমার স্ত্রী সন্তানকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা নিয়ে লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মোস্তফার স্ত্রী ভুক্তভোগী প্রত্যক্ষদর্শী শাহানা বেগম জানান, শনিবার সারাদিন মিস্ত্রী নিয়ে আমার স্বামী বাড়ির নির্মান কাজ করে রাতে দুয়ারপাল গ্রামে মাহফিল শুনতে যান। আমি রাতে বাড়িতে আমার ছোট ছেলেটাকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। এসময় রাত ১২টার দিকে প্রতিপক্ষের ৮ থেকে ১০জন লোক দেশীয় অস্ত্র দা, হাসুয়া, সাব্বল ও কোদাল নিয়ে আমার দিয়ে বাড়ির দরজায় আঘাত করতে থাকে। একই সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। দরজা ভাঙ্গতে না পেরে পিছন দিক দিয়ে টিনের বেড়া কেটে ঘরে ঢুকে আমার উপর শারিরীক নির্যাতন ও মারধর করেন। একই সাথে আমার ৭ বছরের ছোট্ট ছেলে সায়েম এর গলায় হাসুয়া ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি তৈরীর জন্য রাখা ২ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেন। এসময় নির্মানাধীন ঘরের সিমেন্ট রড দিয়ে ঢালাইকৃত সমস্ত ব্যাচ উপড়ে ফেলেন এবং দুটি ব্যাচের রডও তারা নিয়ে যান।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন রাত ১২টার সময় বাড়ি থেকে আওয়াজ পাচ্ছিলাম পাশের বাড়ির মোস্তফার স্ত্রী শাহানা বেগম চিৎকার করছেন আর বলছেন ‘আমাকে মারিওনা চাচা, আমাকে প্রাণ ভিক্ষা দাও, আমাকে বাচাঁও, আমাকে বাচাঁও।’ এমন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ৮ থেকে ১০জন লোক এদের বাড়িতে হামলা করে পালিয়ে যায়।
আরেক প্রতিবেশী খাইরুল জানান, আমরা ঐদিন রাতে আমরা মাহফিল শুনে আসছিলাম। এমন সময় দেখি তোজাম্মেল, জাইদুরসহ আরো লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছেন। আমরা অস্ত্রের ভয়ে ভীত হয়ে তাদের বাধা দিতে পারিনি। তাছাড়া তাদের নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আমরাও ঐ এলাকা ছেড়ে বাধ্য হয়ে চলে এসেছি বলেও জানান তিনি। রবিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়। পুরোনো নিচের চালি টিনের বেড়া দিয়ে বসবাস করা মোস্তফার ঘরটির পিছন দিকটা কাটা অবস্থায় রয়েছে এবং ঘরের দজায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একই সাথে নির্মানাধীন রড সিমেন্টের ব্যাচ গুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেশী আশরাফুল জানান, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ভাঙচুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কাছে এসে দেখি তারা বাড়িঘর ভাঙচুর করছেন এবং অকথ্য ভাষায় মোস্তফা ও শাহানাকে গালিগালাজ করছে। ঐ সময় মোস্তফা বাড়িতে ছিলনা। আমি তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র দেখে ভয় পেয়ে যায় এ কারণে দূরে থাকি।
এছাড়া আরোও বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাজই হচ্ছে মানুষের জমি অন্যায় ভাবে মানুষের জমি দখল করা। দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে তারা মানুষকে হয়রানি করছেন। রাতের বেলায় একজনের বাড়িতে হামলা করে মেয়ে মানুষকে মারধর করা এবং তাদের নির্মানাধীন বাড়িঘর ভাঙচুর করার জন্য তীব্র নিন্দা জানান তিনি। একই সাথে এঘটনার সাথে যারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, অভিযুক্ত সহকারী প্রিন্সিপাল তোজাম্মেল হককে ফোন অভিযোগের বিষয়টি জানকে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঐ জায়গাটি আমরা প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে ভোগ দখল করে খেয়ে আসছি। আমাদের জায়গায় মোস্তফা বাড়ি করছে, সে খবর পেয়ে রাত ১০টার পরে সেখানে গিয়ে নির্মানাধীন পিলার গুলো উঠিয়ে ফেলেছি। কিন্তু টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। জমির কাগজপত্র কার নামে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাগজে কিছুটা ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় বিচারে বসা হয়েছিল। সকলের সিদ্ধান্তক্রমে ওখানে সে এমনিতে বসবাস করতে পারবে, কিন্তু কোন স্থায়ী স্থাপনা (বাড়িঘর) নির্মান করতে পারবেনা। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ভুক্তভোগী মোস্তফা বলেন, আমার জমিতে আমি বাড়ি করব, এখানে অন্যের বাধা আমি মানব কেন? অভিযুক্ত প্রতিপক্ষরা যে ক্ষতি আমার করেছে, এর ন্যায্য বিচার আমি সরকারের নিকট চাই। এ বিষয়ে সাপাহার থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহমুদ জানান, আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।