বড় আকারের এ পাখিটির নাম শামুকভাঙা। শামুকখোল, শামুকখেকোও বলা হয়। ইংরেজি নাম Asian open-bill । বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans । শরীরের মাপ ৯৯ সেন্টিমিটার। মাটিতে দাঁড়ানো অবস্থায় এর উচ্চতা শরীরের মাপের সমান। বড়সড় এ পাখিটির মধ্যে বোকাসোকা নিরীহ ভাব আছে। মাথার চাঁদি থেকে ঘাড়-গলা-বুক-পেট হয়ে লেজের তলা পর্যন্ত সাদা। লেজের তলা ও উপরের কিছুটা অংশ আবার কালো। বোজানো অবস্থায় ডানার অধিকাংশ সাদা, শুধু প্রান্তদেশ কালো। ঋতুভেদে আবার এদের শরীরের রং কিছুটা পরিবর্তন হয়। শামুকভাঙা মূলত জলাভূমির পাখি। তবে শুকনো জমিতেও সাপ-ব্যাঙ ধরে। খাদ্য তালিকায় আছে মাছ, কাঁকড়া, শামুকের ডিম, কচ্ছপের ছোট ছানা। শক্ত ঠোঁট দিয়ে এরা শামুক ভেঙে খেতে পারে। ঝাঁক বেঁধে যখন এরা খাবার সংগ্রহ করে তখন দেখতে ভারি সুন্দর লাগে। এরা বাসা বাঁধে ভাদ্র মাসে। জ্যৈষ্ঠ মাসেও বাসা করতে দেখা যায়। দু’জনে মিলে বাসা সাজায়। পুরুষ পাখিটি উপকরণ বেশি আনে। বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৭-৯ দিন। ডিম পাড়ে দুই থেকে চারটি। ডিমের রং ঘোলাটে সাদা। ৩০-৩৩ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। বাচ্চারা উড়তে শেখে ৫০-৬০ দিনে। বড় আকারের এ পাখিটি দলে থাকে সব সময়। দলনেতা দল চালায়। শামুকভাঙা বাংলাদেশে এখনো বেশ দেখা যায়। তবে সংখ্যায় কম। হাওরাঞ্চলে বিচরণ বেশি। খাবার বা বাসা করার মতো গাছেরও অভাব নেই। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রাজশাহীর পুঠিয়ায় এদের একটি কলোনিও আছে। সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে পাখিগুলোকে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় এই পাখিগুলো এখন খুব কম দেখা যায়। পাখি প্রেমিকদের মতে, এ পাখিগুলো নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় খাবারের অভাবে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাখিগুলো সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।