প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শিক্ষিকার স্বামী। তাই প্রতিষ্ঠানে আসেন ইচ্ছেমত। নিয়মের কোন তোয়াক্কা নেই। প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত না এসেও শতভাগ উপস্থিতি হাজিরা। উত্তোলন করছেন মাসের বেতন-ভাতা। এরমকই ঘটনা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের এক মাদ্রাসার শিক্ষিকা প্রতিষ্ঠানে না উপস্থিত না থেকেও শিক্ষক হাজিরা খাতায় শত ভাগ হাজিরা স্বাক্ষর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী শিক্ষিকা মোসা. ফিরোজা খাতুন। ওই শিক্ষিকা থাকেন তাঁর রাজশাহীর বাড়িতে। আর সপ্তাহে ২দিন মাদ্রাসায় এসে পুরো সপ্তাহের স্বাক্ষর করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই মাদ্রাসার কমিটির সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম তাঁর স্বামী হওয়ায় তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তিনি। বিধায়, তিনি মাদ্রাসায় নিয়মিত না এসেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। শিক্ষিকার স্বামী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ায় ভয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য এবং শিক্ষকরা কিছু বলতেও পারেন না। আর বললেও ওই শিক্ষিকা তেমন একটা পরোয়া করেন না। প্রতিষ্ঠানে এসে প্রতিদিনের হাজিরা করে নেন। এভাবেই দীর্ঘদিন থেকেই দায়িত্ব পালন না করে মাসের বেতন-ভাতাদী উত্তোলন করছেন।
এছাড়া মাদ্রাসার সুপার মো. রইসুদ্দিন একাধিকার মৌখিক এবং লিখিক শতর্ককরণ নোটিশ ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে নিষেধ করার পরও তিনি হাজিরা খাতায় সই করেন এবং তাঁর স্বামী কমিটির সভাপতিকে সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। গত কয়েকদিন থেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা মোসা. ফিরোজা খাতুনকে মাদ্রাসায় উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হলে এবতেদায়ী শিক্ষিকা মোসা. ফিরোজা খাতুন ১৯৯৮ সালে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি ঠিকমত মাদ্রাসায় ক্লাসে আসতেন না। আর ২০২২ সালে বর্তমান সরকার মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত করলে তিনি মাঝে মধ্যে মাদ্রাসায় আসেন এবং শিক্ষক হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর এক সাথে করেন। এদিকে, মাদ্রাসার চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ফিরোজা ম্যাম মাদ্রাসায় ঠিকমত আসেন না। তিনি কোন সপ্তাহে একদিন আবার কোন সপ্তাহে দু’দিন আসেন। আমাদের পড়াশোনা ঠিকমত হচ্ছে না ফিরোজা ম্যামের জন্য। তাঁর ক্লাস থেকে আমরা বঞ্চিত। এছাড়া নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, একজন শিক্ষিকা মাদ্রাসায় উপস্থিত না হয়ে কিভাবে বেতন-ভাতা পান? শুনেছি, তিনি কোন সপ্তাহে একদিন, আবার কোন সপ্তাহে দুইদিন আসেন। এটাও সত্য না হতে পারে। মাদ্রাসার কমিটির সভাপতি ওই শিক্ষিকার স্বামী বলে যা ইচ্ছে তাই করবেন? আমরা এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি। এব্যাপারে এবতেদায়ী শিক্ষিকা মোসা. ফিরোজা খাতুনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, গোয়াবাড়ি চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রইসুদ্দিন বলেন, আমি একাধিকার মৌখিক এবং লিখিক শতর্ককরণ নোটিশ ও হাজিরা খাতায় সই করতে নিষেধ করার পরও তিনি হাজিরা খাতায় সই করেন এবং তাঁর স্বামী কমিটির সভাপতিকে আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে সভাপতি আমাকে শিক্ষিকা ফিরোজাকে হাজিরা খাতায় সই করতে দিতে বলেন। আমি বাধ্য হয়ে তাঁকে সই করতে দেই। এব্যাপারে মাদ্রাসার সভাপতি মো. মনিরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুর রশিদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।