সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে সাংবাদিক এটিএম তুরাব নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৮-১০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় সিলেটের সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন তুরাবের বড় ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ (জাবুর আহমদ)। অভিযোগের কপি গ্রহণ করেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ ও কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন শিপন। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে করা একটি মামলার তদন্ত চলমান আছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য তুরাবেব পরিবারের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একসঙ্গে তদন্ত করবেন।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে গুলিবিদ্ধ হন তুরাব। পরে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান দৈনিক নয়া দিগন্তের এই প্রতিনিধি। তুরাব স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদের নিজস্ব প্রতিবেদকও ছিলেন। এ বিষয়ে সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই জাবুর আহমদ থানায় দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করেন, শুক্রবার বেলা ১টা ৫৫ মিনিটের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য কোর্ট পয়েন্টে অবস্থান করেন তুরাব। একপর্যায়ে জুমার নামাজের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মিছিল শুরু করলে তুরাব মিছিলের পিছনে অন্যান্য সহকর্মীসহ অবস্থান নেয়। মিছিলটি পুরানলেন গলির মুখে পৌঁছলে সশস্ত্র পুলিশ বিপরীত দিক থেকে অবস্থান নেয়। ঐ মুহূর্তে হঠাৎ লাগাতার গুলিবর্ষণের শব্দ শুনে আমার ভাই তুরাব বলে ‘আমাকে বাঁচাও আমাকে মেরে ফেলছে। আমার চোখে মুখে গুলি লেগেছে।’ একথা বলেই সে মটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায়। স্বাক্ষী ও পথচারীরা তাকে প্রথমে ওসমানী মেডিকেল কলেজে ও পরে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে অভিযোগে আরও বলা হয়, অত্যাধিক গুলির কারণে ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেন নাই। এমতাবস্থায় চিকিৎসারত অবস্থায় ঐদিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটের সময় সে মৃত্যুবরণ করে। গোলাগুলির স্থিরচিত্র ও ভিডিও চিত্র সাংবাদিকদের কাছে আছে জানিয়ে ‘তদন্তকালে তা উপস্থাপন করা হবে’ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা। তুরাবের দাফনসহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করে এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে জানিয়ে ‘তুরাবের খুনীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা’ গ্রহণে অনুরোধ করা হয়েছে অভিযোগে। কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জমা দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, ওভারসীজ করেসপনডেন্ট এসোসিয়েশন সিলেট (ওকাস) এর সভাপতি খালেদ আহমদ, দৈনিক প্রভাতবেলা সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কবির আহমদ সোহেল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, সহসভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, সাংবাদিক দিগেন সিংহ, মুনশি ইকবাল, এমজেএইচ জামিল। সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন খান বলেছিলেন, কী কারণে এবং কিভাবে সাংবাদিক তুরাব নিহত হয়েছেন তার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।