বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমন করে বিদেশে পাড়ি দেয়া হায়াত আলী মানসিক কস্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। কখন দায়মুক্তি হবেন এটা থেকে। অবশেষে ৮ বছর পর দেশে ফিরে নতুন করে ট্রেনের টিকিট কেটে মানসিকভাবে দায়মুক্তি হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে হায়াত আলী। এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মানুষই যখন ট্রেনের টিকিট না কেটে ফাঁকি দিতে চায়, তখন ৮ বছর পর রেল বিভাগকে সেই টাকা দিয়ে নিজেকে অপরাধ বা দায়মুক্ত করার ঘটনা সত্যিই বিরল। জানা গেছে, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট না পেয়েও উঠে পড়েন হায়াত আলী। ঢাকা থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে আসা ট্রেনে ভাগ্যক্রমে একটি সিটও পেয়ে যান। এরপর টিটিই আসলেও হায়াত আলী ঘুমিয়ে থাকায় তার টিকিট আছে কি না দেখেননি টিটিই। ঘুম ভেঙে হায়াত আলী দেখেন গন্তব্যস্থল রাজশাহী পৌঁছে গেছেন। এমন ঘটনা হরহামেশাই হয়ে থাকে। তবে ব্যতিক্রম ঘটনা, ট্রেন ভ্রমণের দীর্ঘ ৮ বছর পর টিকিট কেটেছেন প্রবাসী হায়াত আলী (২৮)। বুধবার (৭ জুন) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটেন তিনি। বিদেশে যাওয়ার জন্য একটি ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় গেছিলেন হায়াত। ফেরার পথে টিকিট না কেটেই ট্রেনে ভ্রমণ করেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। টাকা না দিয়ে ভ্রমণ করার অনুশোচনা থেকেই ৮ বছর পর টিকিট কেটে দায়মুক্ত হতেই ছুটে যান রেলস্টেশনে। এসময় ৩৪০ টাকার একটি টিকিট কেটে দেন টিকিট মাস্টার। দায়মুক্ত হতে পেরে খুশি কাতার প্রবাসী হায়াত আলী।
এবিষয়ে হায়াত আলী বলেন, আগে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতাম। ৮ বছর আগে বিদেশ যেতে ঢাকায় ইন্টারভিউ দিতে যায়। টিকিট পায়নি তবুও ট্রেনে উঠি পড়ি। ভেবেছিলাম, ট্রেনে উঠার পড় দাঁড়িয়ে থাকার টিকিট কেটে নিব। কিন্তু সিট পেয়ে ঘুম চলে আসে। এরমধ্যে কখন টিটিই আসে তাও জানি না। ঘুম ভেঙে দেখি রাজশাহী চলে এসেছি। পরে দিব দিব করে ট্রেনের টিকিটের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কাতার থেকে দেশে ফিরেছি। এসেই ভাবলাম, বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করে এতে দীর্ঘ সময় পার করে দেয়া উচিত হয়নি। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে এসে এখানকার সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি খুলে বলি। এরপর তাদের সহযোগিতায় ৩৪০ টাকার একটি টিকিট কেটেছি। এখন ভালে লাগছে, নিজেকে দায়মুক্ত করতে পেরেছি। সকলের উচিত, ট্রেনে টিকিট কেটে ভ্রমণ করা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, এমন ঘটনা খুবই বিরল। যা সচারাচর দেখা যায় না। অনেকদিন আগে ট্রেন ভ্রমণ করার পরেও তা পরিশোধ বা টিকিট সংগ্রহ করার ঘটনা বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারী যাত্রীদেরকে টিকিট কাটতে উৎসাহ দিবে। ৩৪০ টাকা বড় কথা নয়, সবচেয়ে বড় দৃস্টান্ত হলো-অনুশোচনা, অপরাধবোধ কাজ করা এবং সেটা শোধরানোর অদম্য ইচ্ছা। হায়াত আলী আমাদের সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর বলার পর আমরা তাকে ঢাকা-রাজশাহীর একটি টিকিট দিয়ে তা রাজস্ব খাতে জমা করেছি।