চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ছনের ঘর এখন চোখে পড়ে না। বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বিদের নিকট ছনের ঘর এখন শুধুই স্মৃতি। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে ছনের ঘর কি তা তারা জানে না, একদমই অচেনা।
একসময়ে গ্রামের পাড়া-মহল্লার বাড়িতে শোভা পেত ছনের ঘর। ছনের চালার ঘরগুলোও স্বাস্থ্যসম্মত বলে অনেকেই মনে করেন। সময়ের পরিক্রমায় ও আধুনিকতায় ছনের চালার পরিবর্তে ওই ঘরগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে টিনের চালায়। তিন/চার দশক আগেও বিভিন্ন স্থানে গরিব ও মধ্যবিত্তদের ছনের চালার ঘর ব্যবহার করতেন।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের বাড়িতে বাড়িতে প্রতিটি সুন্দর ছাউনির পরিপাটি ছনের চালার ঘর ছিল। মাটির দেয়াল কিংবা বাঁশের বেড়ার ও ঘরের ছাউনির জন্য একমাত্র অবলম্বন ছিল ছন। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ছন সংগ্রহ করে শ্রমিক লাগিয়ে ঘরের ছাউনি দেয়া হতো। এগুলো ছিল গ্রামীন ঐতিহ্য। কেউ কেউ ছন কেটে শুকিয়ে ভার বেঁধে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠতো ছনখলা। সেখানে ছনের অভয়ারন্যের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থলও গড়ে উঠতো। দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা ছন সংগ্রহ করতে না পারায় ধান গাছের খড় সংগ্রহ করে ছাউনির কাজ সেরে নিতেন। এভাবেই দীর্ঘ সময়ে গ্রামীণ বাড়ির অধিকাংশ ঘরে ছনের চালা শোভা পেত। ঘরের ছনের চালার মধ্যে চড়ুই পাখিও বাসা বাঁধতো। স্থানীয়দের মতে, ছনের চালার ঘর ছিল খুবই স্বাস্থ্য সম্মত। তবে সময়ের পরিক্রমায় ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ছনের চালার ঘরগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সম্প্রতি বরেন্দ্র জনপদের গ্রাম-গঞ্জে দু’একটি ছনের চালার ঘর চোখে পড়ে। তারা প্রত্যেকেই দরিদ্র, গৃহ শ্রমিক ও দিনমজুরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে এখনো ছনের চালার ঘরে দিনযাপন করছেন। শেফালী বেগম জানান, আমার স্বামী দিনমজুর করে যে আয় করেন, তা দিয়েই সংসার চলে। তাই ঘরে ছনের চালা বদলিয়ে টিন লাগাতে পারিনি। তবে গরমের সময়ে ছনের চালার ঘরে তেমন গরম লাগে না। আরামদায়ক হিসাবেই বসবাস করা যায়।
কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, ছনের চালার ঘরগুলো আরামদায়কও স্বাস্থ্য সম্মত ছিল। গরমের সময় দিনের বেলাও ঘরে ঘুমানো যেতো। আর এখন গ্রামের বাড়িতে ছনের ঘরই দেখা যায় না। একসময়ে বসতঘর টিন থাকলেও রান্নাঘর ছিল ছনের। এখন সেটিও নেই। কয়েক গ্রাম ঘুরেও ছনের ঘর দেখা যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাজ সেবক জানান, ছনের ঘর গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা ও শীতকালে গরম থাকে। তাই ছনের চালার ঘরে বসবাস ছিল স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি আরো জানান, বর্তমানে বরেন্দ্র জনপদের গ্রাম-গঞ্জে কদাচিৎ ছনের ঘর চোখে পড়ে। ইট-রড, বালু, সিমেন্ট ও টিন গিলে খেয়েছে ছনের ঘর। তবে বিত্তবান ও শৌখিন কেউ কেউ এখনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কিংবা ফ্যাশন হিসাবে নিজেদের বাড়ির কোন কোন ঘরের উপরে ছনের চালা দেয়ার চেষ্টা করেন।