উচ্চ আদালতের রায়ের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদালতের সরজমিন বুঝিয়ে দেওয়া জমিতে নির্মানাধীন দোকানঘর ভেঙ্গে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের রায়ে অসন্তষ্ট হয়ে প্রতিপক্ষ রাতের আধাঁরে এঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবী ভূক্তভোগীদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোশংকরবাটি কলেজ রোডের দোকানঘর গত বুধবার (২ আগষ্ট) রাত ৩টার দিকে অভিনব কায়দায় এক্সাভেটার মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। জোরপূর্বক দখলের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র সাইদুর রহমান। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতের রায় পেয়ে দখলে থাকলেও জোরপূর্বক জমি দখল করতে গভীর রাতে ভাংচুর চালিয়েছে প্রতিপক্ষ তরিকুল ইসলাম ওরফে টি ইসলামের লোকজন। অথচ গত ১২ জুলাই উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে আদালত আমাদেরকে জমিটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। এমনকি এখনও আদালতের বুঝিয়ে দেয়া জমির দখল প্রদানের লাল পতাকা টাঙানো রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শংকরবাটি মৌজার খতিয়ান আরএস ১৬৫০, দাগ ১০২ এর .০৬৬০ একর জমির আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেই তরিকুল ইসলাম ওরফে টি ইসলাম দখল করতে নানরকম অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করেন, রাতে ভাংচুরের সময় টি ইসলামের ছেলে লোকজন নিয়ে আসে। যা সিসিটিভি’র ফুটেজে প্রমান রয়েছে। অভিনব কায়দায় ট্রাকের উপর এক্সাভেটার মেশিন নিয়ে এসে কৌশলে ভেঙ্গে চলে যায়। এই টি ইসলামের বিরুদ্ধে বহু মানুষের জমি দখলের অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের হয়রানী করতে টি ইসলাম মিথ্যা মামলা পর্যন্ত করেছে। এর আগে মামলায় খালাস পেলেও আবারও মামলা দিয়ে হয়রানী করার চেষ্টা করছেন তিনি। আমরা আগে জমি ক্রয় করলেও ঝামেলা করার জন্য টি ইসলাম অনেক পরে ওই জমি ক্রয় দেখিয়ে জমি দখলের খেলা শুরু করে। ওই জমিটি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন টি ইসলাম। সবশেষ উচ্চ আদালতের রায় কেও উনি মেনে নিতে না পারায় ভাংচুর চালিয়ে নতুন করে ঝামেলা সৃষ্টি করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে সদর থানা পুলিশও সন্তোষজনক ভূমিকা পালন করছেন না। সকল কাগজপত্র দেখানোর পর পুলিশের এমন ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি সদর থানা পুলিশকে আদালতের আদেশ মান্য করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনেরও অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আদালতের রায় অমান্য করে অবৈধভাবে জবর দখল করলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও নিরাপত্তার দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী আব্দুল হান্নান ও মোহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
তবে, পুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এস.আই তৈয়ব আলী বলেন, ওই জমির উপর আদালতের ১৪৪ ধারা জারি আছে। একটি মামলাও আছে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সদর থানা পুলিশ ওই সম্পত্তির উপর নজরদারী ও আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য তাদের কে নোটিশ করেছে। একই জমির মধ্যে জমি ক্রয় করে টি ইসলাম দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। কাজেই জমির বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি নিয়ে যেন কোন ঝামেলা সৃষ্টি না হয় সেটিই করছে পুলিশ। কারো বিপক্ষে নয়, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করছে পুলিশ।
তবে, এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে তরিকুল ইসলাম ওরফে টি ইসলাম জানান, তারা নিজেরাই দোকানঘর ভেঙে এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন। এমনকি বিরোধ থাকা জমির পাশে থাকা আমার জমিটি আমার অসুস্থতার সুযোগে জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে। আমি ক্রয়সূত্রে জমি ও দোকানঘরের প্রকৃত মালিক। আদালতকে প্রভাবিত করে তারা নিজেদের পক্ষে একটি রায় নিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করেছি। যা বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছি, সেটার বিপরিতে একটি কাউন্টার মামলা করার জন্য ওরা ষড়যন্ত্র করছে। ঘটনা নিজেরা ঘটিয়ে আমার উপর চাপাতে চাচ্ছে।