চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নে অব্যাহত পদ্মার ভাঙ্গনে দিশেহারা এলাকাবাসী। অব্যাহত ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে ঝরে গেছে ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম। আর শতাধিক পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চললেও, তা রোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ভাঙ্গন রোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন না করলে ভাঙ্গনরোধ সম্ভব হবে না। জানা গেছে, সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ১ ও ৪ নং ওয়ার্ডের চটকপাড়া, সরদারপাড়া, বান্নাপাড়া, ঘোষপাড়া, ছাব্বিশরশিয়া এ ৫টি গ্রাম একসময়ে বেশ সমৃদ্ধ ছিল। পরিবারগুলো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছিল। এ গ্রামগুলোর শত শত বিঘা ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর যেটুকু সম্বল ছিল, সেটুকু রাক্ষসী পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে, সেই সাথে ধ্বংস হয়েছে পরিবারগুলোর সব স্বপ্ন। ভিটেমাটি হারা পরিবারগুলো পাশর্^বর্তী ইউনিয়ন এবং কেউ আবার অন্যের জায়গায় কোন রকমে খুপরি ঘর করে বসবাস করছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে যেন দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে ইউনিয়নটি। ভাঙন কবলিত এলাকার চটকপাড়ার সুমন রেজা জানান, এবারও ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে, এ জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এ ইউনিয়ন। নারায়নপুরের আব্দুল মোমিন জানান, ভাঙন অব্যাহত থাকায় বড় কষ্টে পড়েছে এ ইউনিয়নের মানুষ। এ ইউনিয়নের আগামীতে অস্তিত্ব থাকে কি না সেই চিন্তায় মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফলতি এবং গুরুত্ব না দেয়ার কারণেই এলাকাবাসীর এমন দূরবস্থা। যখন ভাঙ্গন শুরু হয়, তখন মানকাওয়াস্তে বস্তা ফেলে বৃথা ভাঙ্গন বন্ধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু খরচই করা হয়। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ সময়মতোও করা হয় না। নারায়নপুর ইউপি’র ১নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ বেনজির আহমেদ জানান, পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় কয়েকবছর থেকে সরদারপাড়াসহ আশপাশের গ্রামে ভাঙন দেখা দেওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অথৈই পানি, যা কিনা শুধুই স্মৃতি। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে চাইবেনা যে, একসময় এই জায়গাগোলোতে ছিল বাড়িঘর আর জমি। আর আজ সেখানে শুধুই হাহাকার, নেই বাড়িঘর, সব বিলীন হয়ে গেছে। নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ, আশ্রয়ন কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, চরনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙ্গনরোধে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বলেন, এ মুহুর্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভাঙনরোধে সক্ষমতা নেই। আগামীতে নারায়নপুর ইউনিয়নের ৩ কিঃমিঃ ও আলাতুলি ইউনিয়নের ২ কিঃমিঃ স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামীতে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে এবং এ আসনে নৌকা এমপি হলে এ কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, এ মুহুর্তে ৪-৫ কোটি টাকা খরচ করে কোন উপকার হবে না বরং সরকারের অর্থ অপচয় হবে।